ভ্রমণ

আলীকদমের ম্যানিয়াং পাড়ায়

ভবঘুরের খেরোখাতা

শাহ জামাল চৌধুরীরাতে চাঁদের আলোয় ট্রেকিংএর সময় অদ্ভুত একটা ভালোলাগার অনুভুতি হয় আমার। অন্যদের হয় কি না জানিনা। জোঁছনার আলোয় চারিদিক খুব রহস্যময় মনে হয়। অনেক দূরের কোন শব্দ হঠাৎ করে চমকে দেয়। হয়তো দূরে কোথাও পেঁচা ডেকে উঠেছে, মনে হবে আমাদের পাশেই কোথাও ডেকে উঠেছে পেঁচাটা। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, বাঁদুরের পাখা ঝাপটানোর শব্দ, ঝোঁপের মধ্য দিয়ে কোন প্রাণী চলে যাওয়ার খসখসে শব্দ বা রাতজাগা কোন পাখির ডাক সব কিছুই চমকে দেয়। ষষ্ট ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে পাহাড়ের খাড়াই ধরে চাঁদের আলোয় একবার নেমে আসা, পরক্ষনেই আবার উপরে ওঠা। চাঁদের আলো, রাতের রহস্যময় পরিবেশ ও সজাগ ইন্দ্রিয় ক্লান্ত হতে দেয় না। মাসল ক্রাম্প নিয়ে রহস্যময় পরিবেশে ট্রেকিং করতে করতে রাত সোয়া ৯টার দিকে চাঁদের আলোয় দূরে পাহাড়ের ঢালে পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা ৪-৫ টা ঘর চোখে পড়লো। কোন ঘরেই আলো নেই, চাঁদের আলোও যেনো অন্ধকার দূর করতে পারছে না। আমাদের গাইড ল্যাং মুরং জানালো এরা সন্ধ্যার পরেই খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরে। আমাদের হাটার গতি বেড়ে গেলো। অন্ধকার ভেদ করে পাঁচজনের ছোট্ট দলটি ছুটে চলছে অন্ধকার ঘেরা এক রহস্যময় গ্রামের দিকে।

শাহ জামাল চৌধুরী
বিশ্রামরত লেখক

যত কাছে আসছিলাম গ্রামটা ততটাই স্পষ্ট হচ্ছিলো, আঁধার কেটে যাচ্ছিলো। পাহাড়ের উপর থেকে ছবির মত ছোট্ট সুন্দর ম্যানিয়াং পাড়া দেখে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়। চাঁদের আলোয় মনে হচ্ছিল যেন এক কল্পনার জগতে এসে পৌঁছেছি। ম্যানিয়াং পাড়ায় পৌঁছতে পৌঁছতে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা। বান্দরবান জেলার আলিকদম থানার মুরং জনগোষ্ঠির একটি গ্রাম ম্যানিয়াং পাড়া। পাঁচ পরিবারের ছোট্ট, ছিমছাম, ছবির মতো সুন্দর একটি গ্রাম। পাহাড় বেয়ে আমরা যখন গ্রামের কাছে এসে দাঁড়ালাম আমাদের কারোই শরীরে কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই। ম্যানকিউ পাড়া থেকে ম্যানিয়াং পাড়া আসতে আমাদের সব শক্তি যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। আমার মাসল ক্রাম্প করায় প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল প্রচন্ড ব্যাথার।

গাইড ল্যাং মুরং আমাদের সরাসরি নিয়ে গেলেন ম্যানিয়াং পাড়ার কারবারি ম্যানিয়াং মুরং এর ঘরে। মোটামুটি বড় সাইজের একটা ঘর, একপাশে রান্নার ব্যবস্থা। রান্নার জিনিসপত্র খুব সুন্দর করে সাজানো। পাশেই বাঁশের তাকে সাজানো পানির অনেকগুলো পাত্র। তাকের নিচেও তিনটে ঝুরিতে বেশ কিছু পানির পাত্র। পরিপক্ক পাহাড়ি লাউ দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই পানির পাত্রগুলো তৈরি করা হয়। ঘরের এক পাশে ছয়জন ঘুমিয়ে ছিলো। আমাদের ডাকে ম্যানিয়াং মুরং উঠে পরলো। ঘরের একটা পাশ ফাঁকা ছিলো, দেওয়ালে ঝুলানো কিছু নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র। ঘরে প্রবেশ করে ফাঁকা অংশটায় পিঠের ব্যাগ বোঝা নামিয়ে রেখে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম তারপর ল্যাং মুরং বললেন চলুন হাত মুখ ধুয়ে আসি ছরা থেকে, ভালো লাগবে। বের হয়ে হাত মুখ ধোয়ার জায়গা দেখে তো আমাদের এক এক জনের হার্ট ফেল করার মতো অবস্থা। ছরায় যেতে আবারও আশি নব্বই ফিট নিচে নামতে হবে।
(চলবে)

এমন আরো সংবাদ

Back to top button