বিদেশ

কুয়ালালামপুর পার্ক উৎসব: সবুজ অর্থনীতির নতুন গতি

বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনার জন্য অনুপ্রেরণার মডেল

মালয়েশিয়ার রাণী তুয়াংকু রাজার জারিথ সোফিয়াহ তিতিওয়াংসা লেকে কুয়ালালামপুর পার্ক ফেস্টিভ্যাল ২০২৫ উদ্বোধন করছেন। বাম থেকে উপস্থিত মাহেরান জামিল, ড. ওয়ান আজিজাহ, ড. জালিহা ও মইমুনাহ।মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে শুরু হয়েছে কুয়ালালামপুর পার্ক ফেস্টিভ্যাল (Kuala Lumpur Park Festival – KLPF) ২০২৫, যা কেবল শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রদর্শনী নয়—বরং স্থানীয় অর্থনীতিকে সবুজ প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার এক অনন্য উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের (ফেডারেল টেরিটোরি) মন্ত্রী দাতুক সেরি ড. জালিহা মুস্তাফা বলেন, দ্বিবার্ষিক এই উৎসবের লক্ষ্য হলো পর্যটন, আতিথেয়তা এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতকে শক্তিশালী করা।

“এই উৎসব উদ্ভাবনী ল্যান্ডস্কেপ নকশা, সবুজ প্রযুক্তি ও টেকসই স্থানীয় সমাধান প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম,” — বলেন ড. জালিহা, যখন মালয়েশিয়ার রাণী তুয়াংকু রাজার জারিথ সোফিয়াহ উৎসবটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে ১০ দিনব্যাপী এই উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিতিওয়াংসা লেকে (Taman Tasik Titiwangsa)। এতে নার্সারি মালিক, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনার, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা একত্রিত হচ্ছেন শহুরে উদ্যান শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে।

ড. জালিহা বলেন, শহরের পার্কগুলো কেবল বিনোদনের জায়গা নয়; এগুলো প্রাকৃতিক শীতলীকরণ ব্যবস্থা, পানি সংরক্ষণ এলাকা এবং জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল। “এই উৎসব মালয়েশিয়ার ফুলেল ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে—যেখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতিগুলো নগর পার্কে জিন ব্যাংক ও জীববৈচিত্র্যের আর্কাইভ হিসেবে সংরক্ষিত হচ্ছে,” তিনি যোগ করেন।

উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী দাতুক সেরি ড. ওয়ান আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল, কুয়ালালামপুরের মেয়র দাতুক সেরি মইমুনাহ মোহদ শরীফ, এবং ফেডারেল টেরিটোরি বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি নোরিদাহ আবদুল রহিম। কুয়ালালামপুর সিটি হল (DBKL) আয়োজিত এই বিনামূল্যের উৎসবটি চলবে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত, যা আসন্ন “ভিজিট মালয়েশিয়া ২০২৬”-এর অংশ হিসেবে দেশের সবুজ পর্যটন প্রচারে ভূমিকা রাখবে।

এই উদ্যোগ কুয়ালালামপুরের উচ্চাভিলাষী “CHASE City” ভিশনকে আরও শক্তিশালী করছে—যার লক্ষ্য একটি পরিষ্কার (Cleaner), স্বাস্থ্যসম্মত (Healthier), উন্নত (Advanced), নিরাপদ (Safe) ও পরিবেশবান্ধব (Eco-friendly) নগর গড়ে তোলা।

“ASEAN: Unity in Diversity” প্রতিপাদ্য নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত এই উৎসবের চারটি মূল স্তম্ভ হলো, টেকসই জীবনযাপন (Sustainable Living), সাংস্কৃতিক প্রকাশ (Cultural Expression), সামাজিক অংশগ্রহণ (Community Participation), প্রকৃতি-নির্ভর উদ্ভাবন (Nature-based Innovation)।

উৎসবের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে —Mystical Titiwangsa: এক বহুমাত্রিক ইন্দ্রিয়নির্ভর অভিজ্ঞতা, KL Genta: Drum and Dance Festival: আসিয়ান সাংস্কৃতিক তাল ও নৃত্যের উৎসব, ASEAN Halal Food Fiesta: আঞ্চলিক খাদ্য সংস্কৃতির সমাবেশ কুয়ালালামপুরের এই সবুজ উদ্যোগ শুধু মালয়েশিয়ার জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের শহর পরিকল্পনার জন্যও একটি অনুপ্রেরণার মডেল হতে পারে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহীর মতো শহরগুলো এখনো দ্রুত নগরায়ণের চাপে পার্ক, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান হারাচ্ছে। বায়ুদূষণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা ও শব্দদূষণ এখন নাগরিক জীবনের স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবু আশার আলো রয়েছে। ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল, মিরপুরের উদ্যান পুনর্গঠন এবং ঢাকা উত্তর সিটির “সবুজ করিডোর” প্রকল্প দেখাচ্ছে—বাংলাদেশও ধীরে ধীরে পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নগর উন্নয়নে কুয়ালালামপুরের মতো নাগরিক সম্পৃক্ত ও প্রকৃতি-কেন্দ্রিক উদ্যোগ যুক্ত করা গেলে বাংলাদেশেও “সবুজ অর্থনীতি” বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত হতে পারে—যা পরিবেশের ভারসাম্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উভয়কেই সমানভাবে ত্বরান্বিত করবে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker