আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্বের আরেকটি উদাহরণ স্থাপন করল মালয়েশিয়া। রাজধানীর হোটেল শাংরি-লায় ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হলো ASEAN Forum of Manpower Ministers for Human Capital Development (AFMM-HCD)—যা ছিল Global Skills Forum (GSF) 2025-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ফোরামে অংশ নেন আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহ ও তিমর-লেস্তের শ্রমমন্ত্রীবৃন্দ, যাঁরা মানবসম্পদ উন্নয়নে আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও জোরদারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এ বছরের ফোরামের প্রতিপাদ্য ছিল “ASEAN Year of Skills 2025 (AYOS 2025)”, যা দক্ষতা বিকাশ, কর্মসংস্থানযোগ্যতা ও টেকসই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেয়। উদ্বোধনী বক্তৃতায় মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কিয়ং বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়নই টেকসই আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি।
এরপর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ. হুংবো তাঁর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে বৈশ্বিক শ্রমবাজারের পরিবর্তন ও আসিয়ানের ভূমিকা নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন। ফোরামে এইচআরডি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী ড. সৈয়দ আলউই বিন মোহাম্মদ সুলতান একটি কৌশলগত উপস্থাপনা দেন। তিনি ভবিষ্যৎমুখী শ্রমবাজার গঠনের লক্ষ্যে দক্ষতা রূপান্তর, উদ্ভাবনী কর্মশিক্ষা এবং নীতিগত কাঠামোর সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
AFMM-HCD ফোরামটি আসিয়ান দেশগুলোর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা ডিজিটাল রূপান্তর, অটোমেশন ও সবুজ অর্থনীতির যুগে মানবসম্পদের অভিযোজন নিয়ে অভিজ্ঞতা ও কৌশল বিনিময় করেন। আলোচনায় জোর দেওয়া হয় উচ্চ দক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল শ্রমশক্তি গড়ে তোলার ওপর।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় (KESUMA), এইচআরডি কর্প ও আইএলও-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই ফোরামটি আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন দিক উন্মোচন করেছে। আলোচনার মাধ্যমে একটি সমন্বিত নীতিমালা কাঠামো গৃহীত হয়েছে, যা ভবিষ্যতের শ্রমবাজারকে উদ্ভাবন, সামাজিক কল্যাণ ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে রূপান্তরিত করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের আসিয়ান সদস্যপদ লাভের আগ্রহ এ প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। সদস্যপদ পেলে বাংলাদেশ মানবসম্পদ উন্নয়নে বহুমাত্রিক সুবিধা অর্জন করতে পারবে।
প্রথমত, আসিয়ান অঞ্চলের দক্ষতা বিনিময় ও কর্মশিক্ষা উদ্যোগে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়বে, যা বাংলাদেশের শ্রমশক্তিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সহায়তা করবে। দ্বিতীয়ত, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শ্রমবাজারে গতিশীলতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, ফলে বাংলাদেশের দক্ষ কর্মীদের জন্য নতুন বাজার উন্মুক্ত হবে। তৃতীয়ত, সবুজ অর্থনীতি ও ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন খাতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাংলাদেশের মানবসম্পদে আধুনিক দক্ষতা সংযোজন করবে।
এইভাবে, আসিয়ান সদস্যপদ অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার শ্রমনীতি, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থান কৌশলে আঞ্চলিক মানদণ্ড স্থাপন করতে পারবে, যা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে। Malaysia MADANI নীতির “কল্যাণ ও অন্তর্ভুক্তি” দর্শনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই ফোরামটি প্রমাণ করেছে—আসিয়ান অঞ্চল দক্ষ, প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমশক্তি গঠনে ঐক্যবদ্ধ, যেখানে ভবিষ্যতে বাংলাদেশও হতে পারে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।



