বিদেশ
সূর্যরশ্মি ছুঁলো ফেরাউনকে, আলোকিত হলো আসওয়ানের প্রাচীন মন্দির
মিশরের দক্ষিণাঞ্চলীয় আসওয়ান প্রদেশের নীলনদের তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক আবু সিম্বল মন্দিরে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হলো এক অনন্য প্রাকৃতিক ও স্থাপত্যিক বিস্ময়। সূর্যের রশ্মি সরাসরি পরলো ফেরাউন (রামসেস দ্বিতীয়ের) মুখমণ্ডলে। বিরল এই মুহূর্ত উপভোগ করতে প্রতিবারের মতো এবারও আবু সিম্বলে ভিড় জমায় হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমী। প্রভাতের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের সোনালি রশ্মি মন্দিরের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে প্রায় ৬০ মিটার ভেতরে গিয়ে পবিত্র প্রবেশ করে আলোকিত করে তোলে ফেরাউন (রামসেস দ্বিতীয়ের) মুখ। প্রায় ২০ থেকে ২১ মিনিট স্থায়ী এই দৃশ্য যেন প্রকৃতি ও স্থাপত্যের এক অসাধারণ সংলাপ।জানা যায়, প্রায় ৩,২০০ বছর আগে, খ্রিষ্টপূর্ব ১২৭৪ সালের দিকে নির্মিত আবু সিম্বল মন্দিরটি প্রাচীন মিশরীয় স্থাপত্যকৌশল ও জ্যোতির্বিদ্যার এক অনন্য নিদর্শন। বিশাল পাথর খোদাই করে তৈরি এই মন্দিরের নকশা এমনভাবে নির্মিত হয়েছিল যে, প্রতি বছর দু’বার—২২ ফেব্রুয়ারি ও ২২ অক্টোবর—সূর্যের প্রথম রশ্মি গর্ভগৃহে গিয়ে আলোকিত করে রামসেস দ্বিতীয়ের মুখমণ্ডল, কিন্তু দেবতা প্থাহের মূর্তি থাকে অন্ধকারে, যিনি মৃতদের দেবতা হিসেবে পরিচিত। গবেষকদের ধারণা, ফেব্রুয়ারির দিনটি রামসেস দ্বিতীয়ের সিংহাসনে আরোহণের দিন এবং অক্টোবরের ঘটনাটি তাঁর জন্মদিনের স্মারক। এই নিখুঁত স্থাপত্য নকশা প্রমাণ করে, প্রাচীন মিশরীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও ধর্মীয় প্রতীকবাদের ক্ষেত্রে কতটা উন্নত ছিল।
আবু সিম্বল মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে আরও এক বিস্ময়কর ইতিহাস। ১৯৬০-এর দশকে আসওয়ান হাই ড্যাম নির্মাণের সময় মন্দিরটি ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়লে ইউনেসকোর উদ্যোগে বিশাল এক আন্তর্জাতিক প্রকল্পের মাধ্যমে মন্দিরটি ৬৫ মিটার উঁচু পাহাড়ের ওপর টুকরো টুকরো করে স্থানান্তর করা হয়। স্থানান্তরের পরও সূর্যের রশ্মি পতনের নির্ভুল সময় ও কোণ ঠিক রাখা প্রকৌশল ইতিহাসে এক নজিরবিহীন সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এই বিরল মুহূর্তকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর পালিত হয় ‘আবু সিম্বল সূর্য উৎসব’। স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মন্দির প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে সঙ্গীত, নৃত্য ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায়। হাজারো দর্শনার্থী ভোর থেকেই অপেক্ষা করেন সেই মহামুহূর্তের জন্য, যখন সূর্যের আলো ধীরে ধীরে ছুঁয়ে যায় প্রাচীন ফেরাউনের মুখমণ্ডল।
প্রতিবারের মতো এবারও এই জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বিস্ময় মনে করিয়ে দেয় প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অমলিন প্রতিভা ও বৈজ্ঞানিক দক্ষতাকে। আজও এই সূর্যালোকের দৃশ্য শুধু পর্যটকদের নয়, বরং ইতিহাস, স্থাপত্য ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষকদের কাছেও এক অমূল্য ঐতিহ্য এবং মানব সভ্যতার অনন্য সাফল্যের প্রতীক।



