‘প্রথা ভেঙে দেওয়া স্বপন’
দেশের তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশ সময় হতাশায় নিমজ্জিত থাকে কি করবে , কি করবে না ভেবে , তারা বুঝতে পারেনা কি করা উচিৎ, কি করে আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘোরানো যাবে সে চিন্তায় মত্ত থাকে। কিন্তু দিশা খুঁজে পায় না কি করলে ভাগ্যের চাকা নিজে ঘোরাতে পারবে শুধু মাত্র সঠিক নির্দেশনার অভাবে, দৃষ্টান্তের অভাবে। প্রথা ভাঙার ভয়কে জয় করতে না পারা বেকারত্বের অন্যতম কারণ। পথহারা তরুণদের একজন বাক্তির বাস্তব সংগ্রামের গল্প অনেক্ মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগাতে বাধ্য। সেই সংগ্রামী ব্যাক্তির নাম এম আর জান্নাত স্বপন। দেশের এক অজপাড়া গা থেকে উঠে এসে স্বনির্ভরতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এম আর জান্নাত স্বপন তা আসলে কোন বিশেষণ দিয়ে বোঝানো যাবেনা। আসুন জেনে নেই এম আর জান্নাত স্বপনের শূন্য থেকে শেখরে যাওয়ার গল্প।
স্বপন প্রথমে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০৩ সালে বাংলাদেশের গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল মিলে। তিনি তার চাকুরী জীবনে বেশ কয়েক হাজার মানুষের চাকুরীর ব্যাবস্থা করেছেন গত ১৭ বছরের টেক্সটাইল ক্যারিয়ারে। তিনি তার স্বপ্নের পেছনে আস্তে আস্তে করে ছুটছিলেন সেই চাকুরী করার সময় থেকেই। আস্তে আস্তে ওয়েবসাইট ডেভেলপিং এর দিকে ঝুঁকেন, শখের বশে ২০১০ এর শুরুতে জুমলা প্লাটফর্ম ব্যাবহার করে সাইবার ক্যাফে থেকে তার নিরন্তর পথচলা শুরু। শুরুতে জুমলাতে ওয়েব সাইট ডেভেলপ করলেও বর্তমানে তিনি ওয়ার্ডপ্রেস প্ল্যাটফরমে কাজ করেন। গত দশ বছরে তিনি ৫০০ টির অধিক ওয়েবসাইট ডেভলপ করেছেন। ব্যাক্তিগত সাইট থেকে শুরু করে নিউজ পোর্টাল , ই কমার্স, বিখ্যাত মিডিয়া সেলিব্রিটির জন্য ব্যাক্তিগত অফিসিয়াল ওয়েবসাইট তৈরী করেছেন তিনি। বেশকিছু ভালোমানের নিউজ পোর্টালও তৈরি করেছেন নিবিড় যত্নে।
এক সময়ের শখ বর্তমানে তার পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে তিনি তার চাকুরী ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজের টেক প্রতিষ্ঠান হুর এজেন্সি নামের একটি ওয়েব ডেভ্লপমেন্ট এজেন্সি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। অসংখ্য কর্মহীন তরুণকে পথ দেখাবে তার এই উদ্যোগ । বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার উপায় শেখাতে চান তিনি দেশের পিছিয়ে পড়া তরুণদের।
কাজের ফাঁকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে টেকনোলজিতে কোন প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান থাকা না সত্ত্বেও তিনি তিনি ইন্টারনেটের উপর ভর করে কীভাবে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন সেটা সত্যিই বিস্ময় জাগানিয়া। আমাদের দেশের তরুণ সমাজ মাঝে মধ্যে হায় হুতাশ করে চাকুরীর জন্য। কিন্তু তারা খুঁজে দেখেনা কীভাবে স্বল্প প্রচেস্টায় স্বনির্ভর হওয়া যায় অল্প সময়ে বিনা পুঁজিতে। শুধু একটা কম্পিউটার আর চেষ্টা বদলে দিয়েছে এম আর জান্নাত স্বপনের জীবন। তিনি যে পথে এগোচ্ছেন দেশের কর্মহীন যুব সমাজ তার থেকে শিক্ষা নিতে পারে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে।
শেষ করতে চাই সুনীল চৌধুরীর থেকে ধার করা লাইন দিয়ে
“ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রী
এখানে থেমোনা
এ বালুচরে আশার তরণী তোমার
যেন বেঁধোনা
আমি শ্রান্ত যে, তবু হাল ধর
আমি রিক্ত যে, সেই সান্তনা,
তব ছিন্ন পালে জয় পতাকা তুলে,
সূর্য তোরণ দাও হানা।”
এম আর জান্নাত স্বপন তার আশার বালুচর থেকে বের করে আশার সমুদ্রে নিজেকে ভাসিয়েছেন, ভেঙেছেন চিরচারিত প্রথা। অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে টেক্সটাইল চাকুরে থেকে এখন টেক জায়ান্ট হওয়ার পথে। অনেক কর্মহীন তরুণ তার সঙ্গী হয়ে আলোর দিশা পাবে এটাই কামনা।