খ্যাতনামা হাঙ্গেরীয়–ব্রিটিশ লেখক ডেভিড স্যালে তাঁর উপন্যাস ‘ফ্লেশ’–এর জন্য পেয়েছেন ২০২৫ সালের বুকার পুরস্কার। সোমবার রাতে লন্ডনের ঐতিহাসিক ওল্ড বিলিংসগেটে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় এই বছরের ৫০,০০০ পাউন্ড মূল্যের সম্মাননা। বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি, ১৯৯৩ সালের বুকারজয়ী লেখক রডি ডয়েল বলেন, “স্যালে এমন একটি বই লিখেছেন, যার মতো কিছু আমরা আগে কখনো পড়িনি। এটি অন্ধকারে ভরা, কিন্তু পড়তে অপার আনন্দ দেয়।”
স্যালে–এর এই ষষ্ঠ উপন্যাস ফ্লেশ এক ব্যক্তি, ইস্তভান–এর জীবনের নানা পর্যায়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। কিশোর বয়সে হাঙ্গেরির এক ফ্ল্যাটে মায়ের সঙ্গে বসবাসরত অবস্থায় ঘটে যাওয়া এক ঘটনার মধ্য দিয়ে গল্পের সূচনা। এরপর সেনাবাহিনীতে যোগ, বিদেশে পাড়ি এবং লন্ডনে এসে উচ্চবিত্ত সমাজে কাজ—প্রতিটি স্তরে ধরা পড়ে পুরুষত্ব, শ্রেণি, শরীর, আকাঙ্ক্ষা ও ক্ষমতার টানাপোড়েন। বিচারকরা একবাক্যে স্যালেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এই বছর বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন অভিনেত্রী সারা জেসিকা পার্কার, লেখক ক্রিস পাওয়ার, আয়োবামি আদেবায়ো এবং কাইলি রিড। রডি ডয়েল বলেন, “বইটি এমন এক কর্মজীবী মানুষের গল্প, যার মতো চরিত্র আমরা সাধারণত সাহিত্যজগতে খুব কম দেখি। এটি এক ধরনের নীরব সংগ্রামী পুরুষকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে চিনতে শেখায়।”
দ্য গার্ডিয়ান–এর সমালোচক কিয়ারান গডার্ড লেখেন, “স্যালে মানুষের অস্তিত্বের অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা ও শারীরিক বাস্তবতাকে ভাষায় পরিণত করেছেন। তাঁর লেখার গঠন সংক্ষিপ্ত হলেও গভীর।” এবারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন আরও পাঁচজন লেখক—অ্যান্ড্রু মিলার (The Land in Winter), কিরণ দেশাই (The Loneliness of Sonia and Sunny), সুসান চোই (Flashlight), কেটি কিতামুরা (Audition) এবং বেন মার্কোভিটস (The Rest of Our Lives)। মনট্রিয়েল–জন্ম স্যালে বেড়ে উঠেছেন লন্ডনে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে বিজ্ঞাপনের জগতে কাজ শুরু করেন, যা পরে তাঁর প্রথম উপন্যাস London and the South-East–এর অনুপ্রেরণা দেয়। বর্তমানে তিনি ভিয়েনায় বসবাস করছেন।
স্যালে জানিয়েছেন, ফ্লেশ এসেছে এক ব্যর্থতার ভেতর থেকে—তিনি কয়েক বছর ধরে লেখা একটি উপন্যাস বাতিল করে নতুন করে শুরু করেন। তাঁর ভাষায়, “আমি চেয়েছিলাম এমন এক বই লিখতে, যা আমাদের শরীর ও অস্তিত্বের ভেতরের অনুভূতিটাকে প্রকাশ করবে।” এই পুরস্কারের মাধ্যমে প্রকাশনা সংস্থা জোনাথন কেপ–এর জয়সংখ্যা দাঁড়াল দশে—যা বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে সর্বাধিক। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ করেছে বিজয়ী বই Orbital (সামান্থা হার্ভি) এবং The Promise (ডেমন গালগাট)।



