ভ্রমণ

শার্লক হোমসের বাড়ি ২২১ বি, বেকার স্ট্রিট

শার্লক হোমসের বাড়ি ২২১ বি, বেকার স্ট্রিট লন্ডন শহরের বুকে এমন একটি ঠিকানা আছে, যা কোনো সাধারণ বাড়ির পরিচয় বহন করে না এটি একটি। ঠিকানাটি হলো ২২১ বি বেকার স্ট্রিট, লন্ডন। ঠোঁটে পাইপ, হাতে ছড়ি, পরনে ওভারকোট এবং মাথায় কানটুপি পরিহিত সেই দীর্ঘদেহী মানুষটির কীর্তিতে আজও মজে আছে তামাম বিশ্ব। যে স্রষ্টার কল্পনাপ্রসূত এই চরিত্র, সেই স্যার আর্থার কোনান ডয়েলকে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়তো আজ এই বাড়িটি এক জীবন্ত জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। হ্যাঁ বলছিলাম শার্লক হোমসের বাড়ির কথা।

লন্ডন ভ্রমণে এসেও ২২‍১ বি বেকার স্ট্রিটের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করেননি, এমন গোয়েন্দা-ভক্ত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ১৯৯০ সাল থেকে সংগ্রহশালা হিসেবে চালু হওয়া এই বাড়িতে প্রতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন সেই গোয়েন্দা-ছোঁয়া পেতে।

পেশায় চিকিৎসক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ১৮৮৭ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘আ স্টাডি ইন স্কারলেট’ দিয়ে শার্লক হোমসের পথচলা শুরু করেন। এই উপন্যাসে ১৮৮১ সালের কোনো এক সময়ে লন্ডনের এই ভাড়া ফ্ল্যাটেই যুদ্ধফেরত চিকিৎসক-সৈনিক ডক্টর ওয়াটসন শার্লকের রুমমেট হয়েছিলেন। এরপর লেখা হয় ‘দ্য সাইন অব ফোর’। তবে এই প্রথম দুটি কাহিনি সেভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। হোমসের জনপ্রিয়তাটা সত্যিকার অর্থে শুরু হয় যখন তাঁর ছোটগল্প ‘স্ক্যান্ডাল অব বোহেমিয়া’ দ্য স্ট্যান্ড ম্যাগাজিনে ছাপা হয়। এই একটি গল্পেই কিশোর থেকে বয়স্ক পাঠক সারা দুনিয়া মোহিত হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকেই কালক্রমে গোটা বিশ্বে ভক্ত তৈরি হতে থাকে এই গোয়েন্দা চরিত্রের। প্রায় এক শতাব্দী পেরিয়েও কোনো গোয়েন্দা চরিত্র মানুষের মনে এমন অবিচল জায়গা করে নিতে পারেনি।

শার্লক হোমসকে আধুনিক গোয়েন্দা বিজ্ঞানের অন্যতম বিস্ময় বলা হয় তাঁর অসাধারণ ক্ষমতার জন্য। সামান্য একটি সূত্র, একটি পায়ের দাগ, সিগারেটের ছাই, রক্তের ফোঁটা, কিংবা নখের আঁচড় এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চিহ্নগুলো গবেষণা করে হোমস দিব্যি পৌঁছে যেতেন অপরাধী পর্যন্ত। অপরাধ তদন্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির এমন নিখুঁত ও বিস্ময়কর প্রয়োগই স্যার আর্থার কোনান ডয়েল সৃষ্ট এই চরিত্রকে অনন্য করে রেখেছে। এই চরিত্রকে নিয়ে স্রষ্টা চারটি বড় আকারের উপন্যাস এবং ৫৬টি ছোটগল্প লিখে গিয়েছেন।

কীভাবে যাবেন বেকার স্ট্রিটে

লন্ডনের যেকোনো প্রান্ত থেকে পাতাল রেলে চেপে বেকার স্ট্রিটে আসা সহজ। স্টেশনে নামা মাত্রই পর্যটকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ডিটেকটিভ শার্লক হোমসের সুদৃশ্য ভিজিটিং কার্ড, যা যেন মনে করিয়ে দেয় ভক্তদের আসল গন্তব্যের কথা। স্টেশন পেরিয়ে সামান্য আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে শার্লক হোমসের একটি বিশাল মূর্তি মাথায় ‘হ্যাট’, হাতে ‘পাইপ’। বেকার স্ট্রিট আন্ডার গ্রাউন্ড স্টেশনের বাইরেও এখন বসানো হয়েছে হোমসের ৯ ফুট উঁচু আর একটি বিশাল মূর্তি। এই স্থানগুলোই প্রমাণ করে যে, শার্লক হোমস কেবল সাহিত্যের একটি চরিত্র নন, তিনি বিশ্বজুড়ে রহস্য উদঘাটনের প্রেরণা এবং গোয়েন্দা সাহিত্যের এক অমর কিংবদন্তী।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker