
রংপুর অঞ্চলে শুরু হয়েছে আগাম আমন ধান কাটা ও মাড়াই। ধানের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে, সেইসঙ্গে বেড়েছে খড়ের চাহিদা। খড়েরও ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। তাই আগাম ধানের ভালো ফলন হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে খড়ের দাম গত বছরের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর পেছনে রয়েছে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ধানের ফলন হ্রাস এবং চারণভূমির অভাব।
রংপুর সদরের মমিনপুর গ্রামের খামারি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আগে মাঠে গরুকে ঘাস খাওয়ানো যেতো, কিন্তু এখন পতিত জমি বা নীচু জমি আর ফাঁকা থাকে না। ফলে চাষ করা ঘাস ও খড়ের ওপর গরুর খাদ্যের নির্ভরশীলতা বেড়েছে।’ খামারি সিরাজ জানান, গত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসের বন্যার কারণে এ অঞ্চলের সব উন্মুক্ত এবং চাষ করা তৃণভূমি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ঘাসের সংকটও দেখা দিয়েছে। এ কারণে যারা আগাম ধান চাষ করেছেন তাদের খড়ের চাহিদাটা অনেক বেশি এবং তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন। চলতি মৌসুমে আগাম ধান ও খড় বিক্রি করে রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আগাম আমন ধান উৎপাদন হওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। একই ধানের খড় বিক্রি করে কৃষকদের বাড়তি আয় হবে আরও ৫০০ কোটি টাকার বেশি। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ২০ আটির বোঝা ২২০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন ২০টি আটি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা।
বিক্রেতা আল আমিন জানান, নতুন ধানের সঙ্গে সঙ্গে খড়ের দাম ভাল পাওয়ায় তিনি খুশি। ক্রেতা রানা মিয়া বলেন, গো খাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে এই অবস্থায় খড়ই গরুর জন্য উত্তম খাদ্য। তবে দাম একটু বেশি হওয়া গবাদিপশুর খাদ্য যোগান দিতে খরচ বাড়ছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক দোন জমিতে (২৪ শতক) খড় পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ আটি। সেই হিসেবে এক একর জমিতে পাওয়া যায় ২ হাজার আটি। এক হেক্টরে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার খড়ের আটি পাওয়া যাবে।
আটি প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা করে। সেই হিসেবে প্রতি হেক্টরে আটি বিক্রি করে কৃষকদের আয় হবে ৩০ থেকে ৩৪ হাজার টাকা। এই হিসেবে এক লাখ হেক্টরে ধানের আটি বিক্রি করে আয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।
অন্যদিকে, চলতি মৌসুমে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলায় বিনা-৭ ব্রি -৩৩, ৩৯, ৫৬, ৫৭ ও ৬২, ৭১.৭৫, ৮৭, ১০৩ সহ হাইব্রিড ধান উৎপাদন হয়েছে এক লাখ হেক্টরের ওপরে। বিনা-৭ ও ১৭ ধানও হচ্ছে এই সময়ে। ১২০ দিনের মধ্যে এসব ধান ঘরে তোলা যায়। আগাম ধান প্রতি হেক্টরের গড়ে প্রায় ৪ মেট্রিক টন ফলন দিচ্ছে। এই পরিমাণ জমি থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। বাজারে প্রতি মান ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত, যা এক টনে ৩৫ হাজার টাকা।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষিক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এজন্য জলবায়ু সহনশীল জাতের চাষে জোর দেওয়া হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল ও খরা সহিষ্ণু বিনাধান-১৭ স্বল্পজীবন ধান কেটে কৃষকরা দ্রুত গম, সরিষা বা আলু চাষে যেতে পারছেন। এই জাত চাষে অন্যান্য জাতের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম সার ও সেচ লাগে। কাউনিয়া উপজেলার কৃষক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, এক হাজার আটি খড় বিক্রি করে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করেছেন। খড়ের ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কয়েক বছর আগেও আগাম জাতের ধান চাষের কথা চিন্তা করা যেত না। তবে, এখন এই চাষ কৃষকদের অভাব দূর করছে।



