ছাত্র-জনতার গণ-অর্ভুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে যে উল্লম্ফন শুরু হয়েছিল, সেটি অব্যাহত রয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবরেও দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৫৬ কোটি বা ২ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রবাসীদের পাঠানো এ অর্থের পরিমাণ ৩১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর আগে সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা ২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ১০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসীরা ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার বেশি পাঠিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
গত অর্থবছরে প্রবাসীরা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। অর্থবছরটিতে দেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। সে হিসেবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
বিদ্যমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘গত অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। সে হিসেবে এ বছর আশঙ্কা ছিল রেমিট্যান্স কিছুটা কমে যাওয়ার। কিন্তু আমরা দেখছি, প্রবাসীরা বৈধ পথে আরো বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সে আরো বড় রেকর্ড হবে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ডলারের সংকট পুরোপুরি কেটে গিয়ে উদ্বৃত্ত থাকছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও বড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবরে প্রবাসীরা ২ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০২৪ সালের অক্টোবরে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে গত মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ শতাংশ।
দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বিরাজমান উল্লম্ফন শুরু হয়েছিল ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান তথা গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রবাসীরা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বৈধ পথে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতে থাকেন। গত অর্থবছরে আসা ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও স্থিতিশীলতা ফেরে।
ডলার সংকটের কারণে ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকেই দেশে রিজার্ভের ক্ষয় শুরু হয়। ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়া রিজার্ভ দুই বছরের মধ্যে অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে। তবে চলতি অর্থবছরের শুরুতে রিজার্ভ বাড়তে শুরু করেছে। অক্টোবর শেষে দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। তবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (বিপিএম৬) দেশের রিজার্ভ ২৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার রয়েছে।



