দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়ায় জন্মান্ধ আবদুল গফুর মল্লিককে কিশোর বয়সে ভিক্ষা করতে বলেছিলেন বাবা। কিন্তু তিনি অন্যের কাছে হাত পাততে চাননি। অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে ঘুরে ঘুরে বাদাম-নাড়ু বিক্রি করেন তিনি। ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে এভাবেই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন আবদুল গফুর।
জীবনসংগ্রামের যোদ্ধা আবদুল গফুরকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা একটি প্রতিবেদন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসে। তাঁর নির্দেশে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামে আবদুল গফুরের বাড়িতে আসেন ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ উপদেষ্টা ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রহুল কবির রিজভী। এ সময় আবদুল গফুর ও তাঁর স্ত্রী নূরজাহান বেগমের হাতে নগদ এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।
এ সময় ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ আহ্বায়ক আতিকুর রহমান, সদস্যসচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মমিন, উপেদষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন, উপদেষ্টা মোস্তফা–ই–জামান, জাতীয় প্রেক্সক্লাবের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জাহিদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি আসলাম মিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন–অর–রশিদ, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব কামরুল আলম, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ পাভেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে যাওয়া আবদুল গফুর ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। কথা বলতে গেলে জড়তা চলে আসে। তবু তিনি অন্যের কাছে হাত না পেতে টিনের ঝুড়িতে নাড়ু, বাদাম আর পাঁপড় নিয়ে গ্রামেগঞ্জে বিক্রি করেন। আবদুল গফুর মল্লিক বলেন, ‘ভিক্ষা করলে মানুষ ভালো বলত না, ঘৃণা করত। কারও ওপর নির্ভর না হয়ে নিজে বাদাম, নাড়ু আর পাঁপড়ের ব্যবসা করে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি। আজ তারেক রহমানসহ বিএনপির যাঁরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, দোয়া করি আল্লাহ যেন তাঁদের মনের আশা পূরণ করেন।’
গফুরের স্ত্রী নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী কখনো ভিক্ষা করেন না। কারও কাছে হাত পেতে চলেন না। আমি তাঁর কাজে সাহায্য করি। নারকেলের নাড়ু বানিয়ে দিই, বাদাম ভেজে প্যাকেট করে দিই। এগুলো নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন। এ থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে।’
গফুরের কোনো সন্তান নেই। স্ত্রী, বড় ভাই কেরামত মল্লিকের ছেলে আবদুল বাতেন, বাতেনের স্ত্রী ও এক সন্তান আছে। বাতেন মল্লিক বলেন, ‘প্রায় ২২ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ায় গফুর চাচার কাছেই বড় হয়েছি। তাঁদের সন্তান না থাকায় আমাকে লালন-পালন করেন। চাচা জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তিনি কখনো কারও কাছে হাত পাতেননি। জীবিকার জন্য নাড়ু-বাদাম বিক্রি করেন।’
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ বাক্স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। জন্মান্ধ আবদুল গফুরের মতো মানুষ ছিল অবহেলিত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মানবিকতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গফুরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারেক রহমানসহ ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এ ধরনের মানবিক কাজ করে যাচ্ছে।
আরো পড়ুন: মুন্সী এনায়েতের প্রামাণ্যচিত্রে ভাগ্য বদল গফুর মল্লিকের



