
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ আর. মার্কোস জুনিয়র মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত আসিয়ান চেয়ারম্যানশিপের প্রশংসা করেছেন। তিনি এই সময়কালকে বর্ণনা করেছেন “অত্যন্ত পূর্ণাঙ্গ এজেন্ডা” হিসেবে, যা কুয়ালালামপুরের সক্রিয় ভূমিকা এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দৃঢ় নেতৃত্বের প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেন। মার্কোস বলেন, “আনোয়ার তাঁর পরিকল্পিত অধিকাংশ, না হলেও প্রায় সব লক্ষ্যই বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আমাদের সবাইকে ব্যস্ত রেখেছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “তিমুর লেস্তেকে আসিয়ানের পূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি আসিয়ানের অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন, যেখানে আমরা যত বেশি সম্ভব অংশীদার দেশকে যুক্ত করতে চাই।” মার্কোস এই কথা বলেন মালয়েশিয়ার জাতীয় বার্তা সংস্থা বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরার রাজের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে। মার্কোস কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলন ও সংশ্লিষ্ট বৈঠকে অংশ নিতে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করেন, যা মঙ্গলবার শেষ হয়। মার্কোস বলেন, আসিয়ানকে এখন ঐতিহ্যগত অংশীদারদের বাইরে গিয়ে নতুন দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে—যেসব দেশ শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে। তিনি উল্লেখ করেন, ট্রিটি অব অ্যামিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন (TAC)-এর আওতায় আসিয়ানের ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব আঞ্চলিক কূটনীতির পরিধি আরও বিস্তৃত করছে। “আমাদের বহু মিত্র দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, এবং এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে আমরা আরও উন্নয়নের সুযোগ দেখছি,” বলেন মার্কোস।
তিনি আরও বলেন, আসিয়ানকে এখন বাণিজ্য, ভূরাজনীতি এবং কূটনীতিতে “অপ্রথাগত অংশীদারদের” সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে, যাতে এই অনিশ্চিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে (যা ভূরাজনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন ও দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে প্রভাবিত) সংগঠনটি প্রাসঙ্গিক ও সক্ষম থাকে। মার্কোস বলেন, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনের সম্পর্ক বিগত বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে। তিনি দুই দেশের নেতৃত্বের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও উন্মুক্ত যোগাযোগকে এর মূল ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। আনোয়ারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রসঙ্গে মার্কোস বলেন, “আমাদের সম্পর্ক খোলামেলা ও সহজ। এই বন্ধুত্বপূর্ণ বোঝাপড়া আমাদের দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো স্বচ্ছতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সঙ্গে সমাধান করতে সহায়তা করে।” তিনি যোগ করেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমরা বন্ধু। কিন্তু আমরা কখনও ব্যক্তিগত বিষয়কে আমাদের জাতীয় স্বার্থের পথে বাধা হতে দিই না।”
ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা ১৯৫৯ সালে, যখন ম্যানিলা কুয়ালালামপুরে তাদের প্রথম প্রতিনিধি প্রেরণ করে, যা পরে ১৯৬৪ সালে কনস্যুলেটে উন্নীত হয়। এরপর থেকে দুই দেশই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রেখেছে। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়া আসিয়ান চেয়ারম্যানশিপ ফিলিপাইনের হাতে হস্তান্তর করে। প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম প্রতীকীভাবে গ্যাভেলটি প্রেসিডেন্ট মার্কোসের হাতে তুলে দেন, যা ২০২৬ সালে ফিলিপাইনের সভাপতিত্বের সূচনা নির্দেশ করে।



