মালয়েশিয়ার কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ) ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) মোট ৬৩.৯৯ বিলিয়ন রিঙ্গিত বিনিয়োগ আয় অর্জন করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১% বেশি। সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু তৃতীয় প্রান্তিকেই (Q৩ ২০২৫) ইপিএফের আয় দাঁড়িয়েছে ২৫.০৭ বিলিয়ন রিঙ্গিত, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬% প্রবৃদ্ধি।
তৃতীয় প্রান্তিকে কোন খাত থেকে কত আয়:
শেয়ারবাজারভিত্তিক বিনিয়োগ: ১৬.৯৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত (৬৮%), ফিক্সড ইনকাম (বন্ড/সুকুক): ৬.৭৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত (২৭%), রিয়েল এস্টেট ও অবকাঠামো: ১.১৪ বিলিয়ন রিঙ্গিত (৪%), মানি মার্কেট ইন্সট্রুমেন্ট: ০.২৩ বিলিয়ন রিঙ্গিত (১%)। মোট আয়ের মধ্যে কনভেনশনাল সঞ্চয়ের জন্য ২০.৪৮ বিলিয়ন এবং শারিয়াহ সঞ্চয়ের জন্য ৪.৫৯ বিলিয়ন রিঙ্গিত বরাদ্দ করা হয়েছে।
মোট সম্পদ বেড়ে ১.৩৭ ট্রিলিয়ন রিঙ্গিত:
২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইপিএফ-এর মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১.৩৭ ট্রিলিয়ন রিঙ্গিত, যা গত বছরের তুলনায় ১২% বেশি। এর মধ্যে ৩৯% আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ, এবং এই প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এসেছে ১৩.৩৩ বিলিয়ন রিঙ্গিত (৫৩%) আয়।
ইপিএফ প্রধান নির্বাহী আহমাদ জুলকারনাইন ওন বলেন, সম্পদের এ প্রবৃদ্ধি দেশের স্থিতিশীল অর্থনীতি, সঠিক পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা এবং ‘লিবারেশন ডে’-পরবর্তী শেয়ারবাজারের পুনরুদ্ধারের ইতিবাচক ফল।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার কারণে বাজার ঝুঁকি বাড়ছে। তাই প্রতিষ্ঠানটি প্রফিট-লুকিংইন কৌশল গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ নিরাপদ মুহূর্তে দ্রুত মুনাফা নিশ্চিত করে ঝুঁকি কমানো।
অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য বাড়ছে সুবিধা:
মালয়েশিয়ায় বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক ইপিএফের আওতায় রয়েছে, যার বড় একটি অংশই বাংলাদেশের। সাম্প্রতিক নীতিগত পরিবর্তনের ফলে তাদের সুবিধা বহুগুণে বেড়েছে।
১. সঞ্চয় এখন আরও সুরক্ষিত
ইপিএফের স্থিতিশীল আয় অভিবাসী শ্রমিকদের কনভেনশনাল ও শারিয়াহ—উভয় হিসাবেই লাভের হার বাড়িয়েছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় এখন বেশি স্থিতিশীল। ২. অনলাইন উত্তোলন (মোবাইল অ্যাপ) আরও সহজ। দেশে ফেরার পর আগের মতো দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়া সরাসরি অনলাইনে সঞ্চয় উত্তোলন করা যাবে। এটি বিশেষভাবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বড় স্বস্তি।
৩. স্বেচ্ছায় সঞ্চয় বেড়েছে ৪৭.৫%। ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে স্বেচ্ছা অবদান দাঁড়িয়েছে ১৫.৩০ বিলিয়ন রিঙ্গিত, যার বড় অংশই এসেছে বিদেশি শ্রমিকদের সঞ্চয় থেকে। প্রথমবারের মতো অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়মিত সঞ্চয়ের আওতায় আসছে।
৪. বিশেষ সুবিধাসমূহ:আঘাতজনিত কারণে কাজ করতে অক্ষম হলে সঞ্চয় উত্তোলন, মৃত্যুর ক্ষেত্রে নমিনিকে দ্রুত অর্থ প্রদান, শারিয়াহ হিসাবের অধীনে আরও স্বচ্ছ ও সুদমুক্ত সঞ্চয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম “আই-অ্যাকাউন্ট মোবাইল” ব্যবহার করে সঞ্চয় নিয়ন্ত্রণ।
নতুন সদস্য বাড়ছে—বিদেশি শ্রমিকই বড় অংশ। ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে নতুন সদস্য নিবন্ধিত হয়েছে ৪,২৭,৩২৯ জন। যাদের উল্লেখযোগ্য অংশই অভিবাসী শ্রমিক। একই সময়ে নতুন নিবন্ধিত নিয়োগদাতা ৬২,৪০১, ফলে মোট সক্রিয় নিয়োগদাতা বেড়ে ৬,২৮,৩২১।
প্রান্তিকভিত্তিক মোট অবদানও বেড়ে হয়েছে ২৭.৮৪ বিলিয়ন রিঙ্গিত, যা আগের বছরের তুলনায় ১০.৫% বেশি।
ইপিএফের বৃদ্ধি মালয়েশিয়ার অর্থনীতি ও শ্রমবাজারে স্থিতিশীলতা তুলে ধরছে। একইসঙ্গে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য ডিজিটাল সেবা, সহজ সঞ্চয়, নিরাপদ উত্তোলন ও দ্রুত বেনিফিট প্রদানের মাধ্যমে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত হয়েছে।



