হিরো অফ দি ডে

হস্তশিল্পে স্বাবলম্বী ৪৫ নারী

বাগেরহাট শহরতলির মারিয়াপল্লির রুম্পা মাখালের কাছ থেকে হস্তশিল্পের কাজ শিখে আরও ৪৪ নারীর সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে

নিজ বাড়িতে ছন ও খেজুরপাতা দিয়ে আকর্ষণীয় পণ্য তৈরির কাজে ব্যস্ত রুম্পা মাখাল ও তাঁর দলের সদস্যরা
নিজ বাড়িতে ছন ও খেজুরপাতা দিয়ে আকর্ষণীয় পণ্য তৈরির কাজে ব্যস্ত রুম্পা মাখাল ও তাঁর দলের সদস্যরা

এইচএসসি পরীক্ষার আগেই বিয়ে হয়ে যায় রুম্পা মাখালের। ২০১৬ সালে বিয়ের কয়েক দিন পরই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। স্বামী যা আয় করতেন, তা দিয়ে সংসার চালাতে ভীষণ কষ্ট হতো। তাই সংসার চালাতে স্বামীকে সহায়তা করতে চাকরির জন্য গেছেন নানা জায়গায়।তবে বিভিন্ন এনজিও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুরেও কাজ মেলেনি। তখন বসে না থেকে নিজের স্কুলজীবনে শেখা হাতের কাজ করবেন বলে মনস্থির করলেন রুম্পা। এরপর চেষ্টা করতে করতে ২০১৯ সালে মিলে যায় কিছু কাজ।

কাশফুলের শুকনা খড়ি ও খেজুরগাছের পাতা দিয়ে রুম্পা শুরু করেন হস্তশিল্পের কাজ। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আরও অনেকে। স্থানীয় ৪৫ নারীকে নিয়ে রুম্পার দল এখন তৈরি করছে ডালা-ঝুড়িসহ নান ধরনের বাহারি পরিবেশবান্ধব পণ্য। দলের প্রত্যেকেই কাজ করেন নিজ নিজ বাড়িতে। রুম্পা মাখাল বাগেরহাট শহরতলির মারিয়াপল্লিতে (খ্রিষ্টানপাড়া) থাকেন। স্বামী-সন্তান নিয়ে তাঁদের তিন সদস্যের ছোট্ট পরিবার। রুম্পা জানান, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনীমহল গ্রামে তাঁর বাবার বাড়ি। খালিশপুরের একটি পাটকলে চাকরি করতেন তাঁর বাবা স্বপন মাখাল। তবে হঠাৎ পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে পুরো পরিবার অভাবে পড়ে। দুই ভাইকে আর বেশি পড়াশোনা করাতে পারেননি বাবা। তবে খুব বেশি ইচ্ছা থাকায় তাঁকে পড়ান। স্থানীয় অ্যাপেক্স গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং খুলনার সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বিয়ের পর স্বামী রিচার্ড ব্যানার্জির সঙ্গে আসেন বাগেরহাটে।

রুম্পা বলেন, ‘বিয়ের পর দুই-তিন বছর চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। ভেবেছিলাম, এইচএসসি পাস করেছি, ছোটখাটো একটা চাকরি হয়তো পেয়ে যাব। সংসারে একটু সাহায্য করতে পারব, কিন্তু তা তো মেলেইনি, অনেক এনজিও-সমিতি উল্টো জামানত হিসেবে টাকা চায়। সেই টাকা কোথায় পাব। তখন হস্তশিল্পের কাজ করার চিন্তা মাথায় আসে। আমি খুলনায় যাই। সেখানে হস্তশিল্প বাজারজাত করার কাজে যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগেই পরিচয় ছিল, সেভাবে কথা বলি। নিজে করব বলে কিছু কাজ আনি। এর মধ্যে আশপাশের অন্য অনেক নারী তখন বলেন, তাঁরাও কাজ করতে চান। আমি তাঁদের কাজ শেখাই। একসঙ্গে কাজ করি। এখন আমি অর্ডার আনি, সবাই মিলে কাজ করে জমা দিই।’ রুম্পা বলেন, ‘আমাদের এই পণ্য তৈরির সব কাঁচামালই স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। ছন ও খেজুরপাতা তো এখানেই পাওয়া যায়। এগুলো সংগ্রহ করে রোদে শুকানো, পানিতে ভেজানো, রং করতে হলে সেগুলো চুলায় জ্বালানো—এমন কিছু প্রক্রিয়া আছে, যা আমরাই করি। এরপর ফরমাশ অনুযায়ী পণ্য তৈরি করে দিই।’

এমন আরো সংবাদ

Back to top button