অর্থনীতিহাইলাইটস

ঋণের কিস্তি ছাড় করে বাংলাদেশকে যেসব পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)ছবি: রয়টার্স

স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন বিষয় আমলে নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে মুদ্রানীতির রাশ টেনে ধরার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এর সঙ্গে সহায়ক নীতি হিসেবে নিরপেক্ষ রাজস্ব নীতি ও মুদ্রার বিনিময় মূল্যের ক্ষেত্রে আরও নমনীয় হওয়ার কথা বলেছে সংস্থাটি। বাইরের আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে এসব পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। মুদ্রানীতির কাঠামো আরও আধুনিকায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে আইএমএফ। মুদ্রানীতি আধুনিক হলে তার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতির প্রভাব জোরদার হবে। মুদ্রার একক বিনিময় হার গ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে আইএমএফ এ ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে আরও নমনীয় হওয়ার ওপর জোর দিয়েছে। তারা মনে করে, অর্থনীতির বহিস্থ ধাক্কা মোকাবিলায় এটি জরুরি।

বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ মার্কিন ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণের অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। কিস্তি ছাড়ের পর দেশের অর্থনীতির মূল্যায়ন করে সংস্থাটি যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে তারা এসব কথা বলেছে। বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)—এ তিনটি ভাগে ঋণ দিচ্ছে আইএমএফ। এবার ইসিএফ বা ইএফএফের আওতায় ৪৬ কোটি ৮৩ লাখ ডলার এবং আরএসএফের আওতায় ২২ কোটি ১৫ লাখ—সব মিলিয়ে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার ঋণ ছাড় করেছে আইএমএফ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আর্টিকেল ৪ শীর্ষক পরামর্শ সম্পন্ন করেছে আইএমএফ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৬ শতাংশ প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমতির দিকে থাকলেও রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। কঠোর মুদ্রানীতি ও নিরপেক্ষ রাজস্ব নীতির কল্যাণে মূল্যস্ফীতির হার আগামী অর্থবছরের শেষ নাগাদ ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে। আইএমএফ মনে করে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি সহায়ক বিনিয়োগ জরুরি। করনীতি সংশোধন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে কর-রাজস্ব বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে সংস্থাটি। ভর্তুকির যৌক্তিকীকরণ, ব্যয় করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আরও দক্ষতার সঙ্গে আর্থিক ঝুঁকি মোকাবিলায় গুরুত্ব দিয়েছে তারা।

উন্নয়নের জন্য দেশে অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। এ বাস্তবতায় আইএমএফ মনে করে, আর্থিক খাতের সংস্কার জরুরি। ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি কমাতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমানোর পাশাপাশি পুঁজি পুনরুদ্ধারে বিশেষ কৌশল প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। পরিচালকেরা এ বিষয়ে একমত যে ব্যাংক খাতের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো জোরদার করা, শাসনব্যবস্থার উন্নতি ও দেশীয় পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করা গেলে আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়বে এবং উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে আইএমএফ মনে করে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা উন্নত করা প্রয়োজন; সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার তাগিদ দিয়েছে তারা। সংস্থাটি মনে করছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ব্যবস্থা উন্নত হলে, তা আর্থিক খাতের আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের তহবিলও পাওয়া যাবে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button