ভ্রমণ

গাজীপুরের পর্যটন কেন্দ্র গুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে

৮৭৯৬৬৫২রাজধানী ঢাকার ইট পাথরের দেয়ালে বন্দি জীবনে হাঁপিয়ে উঠা মানুষের স্বল্প সময়ে অবকাশের অন্যতম স্থান ছিল গাজীপুর। শাল-গজারি বনের আচ্ছাদনে, কোথাও গ্রামীণ পরিবেশে প্রাকৃতিক স্নিগ্ধতা দিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবকাশ কেন্দ্র। গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নিবন্ধিত ৭৬টিসহ রয়েছে আরও শতাধিক ছোট-বড় রিসোর্ট। করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এসব রিসোর্টে জনসামগম নিষিদ্ধ করেছিল জেলা প্রশাসন।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার হানায় গত এক বছরের অধিক সময়ে নানা বিধিনিষেধ থাকায় বন্ধ রাখতে হচ্ছে এসব অবকাশ কেন্দ্র। আর এতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এই পর্যটন খাত। কবে নাগাদ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবেন এসব অবকাশ কেন্দ্রগুলো তা নিয়েও এখনো আশংকা রয়েই গেছে। এ নিয়ে ঘোর অন্ধকার তৈরী হয়েছে শত শত কোটি টাকা খরচ করে অবকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোক্তাদের। উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে অবকাশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও। ইতিমধ্যে অনেকের চাকুরী চলে গেছে, বেতন ভাতাও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকেরই। ট্যুরিজম এসোসিয়েশনের হিসাব মতে, গাজীপুরের অবকাশ কেন্দ্রগুলোতে কাজ করতো ২৫হাজার শ্রমিক। করোনায় ইতিমধ্যে চাকুরী হারিয়েছে ২০হাজার শ্রমিক। বেতন ভাতাও বন্ধ হয়ে গেছে অনেকেরই।

জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে ৭০ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা হয়েছে ড্রীম স্কয়ার রিসোর্ট। প্রতি মাসে এর ব্যবস্থাপনায় ব্যায় হয় ১০লাখ টাকার উপর। গত এক বছর ধরে কোটি টাকার উপর লোকশান গুণতে হয়েছে কর্তৃপক্ষের।

প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: নুরে আলম সিদ্দিকী বাবু বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে ১৩০জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে। করোনার হানায় কাউকে চাকুরিচ্যুত না করেও লোকশান দিয়ে বড় অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি আমাদের এই পর্যটন খাত। এ ক্ষতি আদৌ পুষিয়ে নেয়া যাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এখন বিধিনিষেধ উঠে গেলেও নিয়মিত গেস্ট আসছেন না। কতদিন এভাবে চলবে তা নিয়ে শংকা বয়ে বেড়াচ্ছে।

একই উপজেলার পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামে প্রায় পাঁচ একর জমিতে গড়ে উঠেছে সবুজ পাতা নামের একটি অবকাশ যাপন কেন্দ্র। গ্রামীণ পরিবেশের মধ্যে আধুনিক সকল সুবিধা ও নয়নাভিরাম এই অবকাশ কেন্দ্রে কয়েক কোটি টাকা বিনোয়োগ করেও পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ২২টি কক্ষ। এই অবকাশ কেন্দ্র উদ্ভোধন করা হয় ২০২০সালের মার্চের শুরুতেই। উদ্ভোধনের কয়েকদিন পরই করোনার বিধিনিষেধের মধ্যেই এটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর এক বছরের উপর চলে গেছে। প্রথম অবস্থায় ২৮জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ে এই অবকাশ কেন্দ্রটি চালু হলেও করোনার কারণে ছাঁটাই করতে হয়েছে অধিকাংশদের। বর্তমানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৫জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিদ্যুৎ বিল সহ মাসে আনুসাঙ্গিক লাখ টাকার উপরে লোকশান গুনতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষের।

এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাইমুল হক খান বলেন, তাদের এই অবকাশ কেন্দ্রটি উদ্ভোধনের পরই করোনায় বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে। বর্তমানে সবারই অবস্থা খুব খারাপ। লোকসান গুনতে গুনতে অনেক কর্মচারীকেই বাধ্য হয়ে ছুটি দিতে হয়েছে।

সদর উপজেলার শালবন গ্রিণ রিসোর্টের মহাব্যবস্থাপক মোল্লা আল-আমিন বলেন, করোনার কবলে পড়ে অধিকাংশ কর্মীদেরই ছাঁটাই করতে হয়েছে। বর্তমানে চারজন কর্মী নিয়ে আমাদের কোনমতে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়েছে।

জেলা শহরের পাশেই সুকুন্দি এলাকায় ৫০ বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট “ছুটি”। ঢাকার পাশেই অবস্থিত রিপোর্টটি সেবা ও অন্যান্য দিক থেকে ভ্রমনপিপাসুদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। মাসে অনন্ত ৫০ থেকে ৬০ হাজার দর্শনার্থী পদচারণায় মুখর থাকতো ছুটি রিসোর্ট। এখন পুরো রিসোর্ট জুড়েই শুনশান নিরবতা।

রিসোর্টের সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার মো: তুহিন হোসেন জানান, ছুটি রিসোর্ট একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর প্রতিষ্ঠান। প্রতিমাসের বিদ্যুত বিল, গ্যাস বিল, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বাবদ প্রতিষ্ঠানটির খরচ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫লাখ টাকা ভর্তুকি গুনতে হয়েছে। করোনার সময় কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত না করে বেতন ও অন্যান্য ভাতা ভর্তুকি থেকে দেয়া হয়েছে। এখন করোনা পরবর্তী ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মার্কেটিং এর জোর দেয়া হয়েছে। তবে কর্পোরেট কোন প্রোগ্রাম না পেলেও ফ্যামিলি গেস্ট আসছেন, এতে রিসোর্টের খরচ উঠছে না।

গাজীপুর জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলা জুড়েই শতাধিক অবকাশ কেন্দ্র গড়ে উঠলেও জেলা প্রশাসন থেকে নিবন্ধন রয়েছে ৭৬টির। দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের সকল নিয়ম কানুন মেনে পরিচালিত হচ্ছে এসব অবকাশ কেন্দ্রগুলো।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, স্বাভাবিক ভাবেই করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এ পর্যটন খাত। দীর্ঘদিন ধরেই গাজীপুরের এসব অবকাশ কেন্দ্রগুলো মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে অন্যতম ভূমিকা রেখে আসছে সাথে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতেও তাদের ভূমিকা রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে অন্ধকার ভেদ করে শীঘ্রই আলোর মুখ দেখবে অবকাশ কেন্দ্রগুলো।

তিনি আরো বলেন, ৭৬টি অবকাশ কেন্দ্রের নিবন্ধন থাকলেও অনেকেরই আবার নিবন্ধন নেই। আমরা সবাইকে এক প্লাটফর্মে এনে নজরদারীর উদ্যোগ নিয়েছি। নিবন্ধনের বাহিরে থাকা রিসোর্টগুলোকে ইতিমধ্যেই চিঠি দেয়া হয়েছে।

ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি খবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। এরপরও এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে ভ্যাট ও ট্যাক্স কমিয়ে রিসোর্ট গুলোকে টিকে থাকার সুযোগ তৈরী করতে হবে। ঘোষিত প্রণোদনা আরো সহজ শর্তে বিতরণ প্রক্রিয়া করতে হবে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button