অর্থনীতি

গাজীপুরে বাঙালী-চীনা দম্পতির বিদেশী মুরগীর খামার

258গাইবান্দা সদরের ফিরুজ আলম। একসময় লেখাপড়ার জন্য গিয়েছিলেন চীনে। সেখানে একটি সেমিনারে দেখা হয় প্রশিক্ষক চীনা নাগরিক সুফির সাথে। প্রথমে পরিচয় পরে ২০১১ সালে তা গড়ায় পরিণয়ে। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমদানী রপ্তানীর ব্যবসা শুরু করেন এই দম্পতি। করোনার সময়কালীন সময়ে তাদের কিছু সময় অবসর মেলে। এর ফাঁকেই দেশে চলে আসেন তারা। চীনা নাগরিক সুফি শখের বশে গাজীপুরের কালিগঞ্জের নগরভেলা গ্রামে গড়ে তুলেন মুরগীর শেড। নিজেদের আসা যাওয়ার ফাঁকে চীন থেকে বেশ কিছু ডিম নিয়ে আসেন তারা। কৃত্তিমভাবে এসব ডিম থেকে ফুঁটে ১৩জাতের ৮৪টি বাচ্ছা। সে বাচ্চাগুলো নিয়ে শুরু করেন এসএস রেয়ার ব্রীড এগ্রো ফার্ম। এক বছরেই তাদের খামারের বিভিন্ন জাতের মুরগীর সংখ্যা এখন সাড়ে তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। চীনা জাতের এসব মুরগীকে ঘিরে আমাদের দেশে বানিজ্যকরণের সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে এখন।

এই এগ্রো ফার্মে চাইনিজ সিল্কি, চাইনিজ দেশী, প্রকৃত কাদারনাথ, চাইনিজ বড় জাতের মুরগীর জাত হু হেই জী, হং অ জি, চীনা টার্কি, দেশে প্রথমবারের মতো খামারে লালন পালন হচ্ছে। এখান থেকেই সারা দেশেই চাইনিজ মুরগী পালন ছড়িয়ে দিতে চান এই দম্পতি।

এই খামারের উদ্যোক্তা চীনা নাগরিক সুফি আমাদের সময়কে বলেন, বাংলাদেশে বানিজ্যিক ভাবে পালন হওয়া বিভিন্ন জাতের মুরগীর মাংসের স্বাদ ও দেশীয় মুরগী পালনের বিবেচনায় তিনি এর চেয়েও উন্নত মুরগী বাংলাদেশে পালনের লক্ষে এই খামারটি শুরু করেন। উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এসব মুরগীগুলোর যথাযথ মানানসই হয়েছে। এরা যেমন দ্রুত বেড়ে উঠছে, তেমনি দ্রুত প্রজননের উপযোগী হয়েছে। এভাবেই বেড়েছে তার খামারের মুরগীর সংখ্যা। তার খামারে থাকা চীনা সিল্কি ও প্রকৃত কাদারনাথ মুরগী বাংলাদেশে প্রথম।

তিনি আরো বলেন, চীনে বহু প্রজাতির মুরগী রয়েছে। কিছু রয়েছে দেখতে অনেকটা পাখির মতো। এসব জাতের মুরগী সহ বেশ কিছু উন্নত জাতের মুরগী তিনি বাংলাদেশের প্রকৃতিতে আনতে চান। যা পালন করে অনেক উদ্যোক্তা তৈরী হবে। দেশে বানিজ্যিক ভাবে পালন করে অনেকেই লাভবান হতে পারে।

ফিরুজ আলমের ভাষ্য, তার স্ত্রী চীনা নাগরিক সুফি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তাদের সংসারে তিন ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে চীনাতে লেখাপড়া করছে। তিনি, স্ত্রী ও দুই ছেলে বর্তমানে বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন। শখের বশেই তার স্ত্রী এই খামারটি গড়ে তুলেন। দেশীয় প্রাণী সম্পদের উন্নয়নে তার স্ত্রীর এই উদ্যোগ এখানে নতুন করে উদ্যোক্তা তৈরীতে ভূমিকা রাখছে। তাদের খামারের খবর পেয়ে প্রতিদিন অনেকেই দেখতে আসেন। এলাকার অনেক নারীরাই তার স্ত্রীর কাছে এসব মুরগী পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তারা তাদের বিভিন্ন ভাবে মুরগী পালনের কলাকৈাশল সম্পর্কে অবহিত করেন। চীনা মুরগীর চাষ সম্প্রসারনেও তারা নানাভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চীনা জাতের এসব মুরগী সহজেই মানানসই। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বা অধিক ঠান্ডায় এসব মুরগী সহজেই টিকে থাকতে পারে, তাদের মৃত্যুহারও কম। তাই বাংলাদেশে বানিজ্যিক ভাবে চীনা মুরগীর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তারা যেহেতু শখের বশে এই খামার গড়েছেন সেহেতু কর্মচারীদের পাশাপাশি নিজেরাই এর দেখাশোনা করে থাকেন।

গাজীপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এসএম উকিল উদ্দিন বলেন, আমাদের আবহাওয়া চীনা জাতের মুরগী পালনের উপযুক্ত। ব্যক্তি উদ্যোগে দেশে চীনা জাতে মুরগী পালনের উদ্যোগ অবশ্যই প্রসংসার। আমরা খবর পেয়ে ইতিমধ্যেই এই খামারটি পরিদর্শন করেছি। বিদেশী মুরগী পালণ সম্প্রসারিত হলে এর একটা বানিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্পাদনা
ফয়সাল আহমেদ

এমন আরো সংবাদ

Back to top button