যুক্তরাজ্যের বৈধ অভিবাসন কাঠামোতে পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। নতুন নিয়মে অভিবাসীদের স্থায়ী হওয়ার পথ আরও দীর্ঘ ও কঠোর হচ্ছে, আর অর্থনীতি ও জনসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী পেশাজীবীরা পাচ্ছেন দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ।
হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ নতুন নীতি উন্মোচন করে বলেন, “ব্রিটেনে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ অর্জন করতে হবে যোগ্যতা, দায়িত্ববোধ ও সমাজে অবদান দিয়ে। এটি কোনো স্বয়ংক্রিয় অধিকার নয়।”
অবৈধ প্রবেশকারীদের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা
নতুন নীতিমালায় অবৈধভাবে প্রবেশ করা বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থানকারীদের স্থায়ী আবাসনের জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে ২০ থেকে ৩০ বছর। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় এ শর্তকেই সবচেয়ে কঠোর বলে উল্লেখ করেছে হোম অফিস।
সামাজিক সুবিধার ওপর নির্ভরশীল অভিবাসীদের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০ বছর করা হয়েছে, যা বর্তমান নিয়মের তুলনায় বহু গুণ বেশি।
অর্থনীতি ও জনসেবায় অবদানকারীদের জন্য দ্রুত পথ
এনএইচএসের ডাক্তার ও নার্সদের মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশার ব্যক্তিরা ৫ বছর পরই স্থায়ী আবাসনের সুযোগ পাবেন।
আন্তর্জাতিক মেধাধারী, উচ্চ আয়ের কর্মী বা উদ্যোক্তারা ৩ বছরেই সেটেলমেন্টের যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন—বর্তমান কাঠামো থেকে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ছাড়।
স্বল্প আয়ের ভিসায় আসা হাজারো অভিবাসীর ওপর প্রভাব
২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা ভিসা রুটে আসা ৬ লাখের বেশি অভিবাসী ও তাদের পরিবার নতুন ব্যবস্থায় ১৫ বছরের ভিত্তি সময়ের মুখোমুখি হবেন। ব্যাপক অপব্যবহারের অভিযোগে এই রুটটি চলতি বছরেই বন্ধ করা হয়েছে।
প্রথমবারের মতো শাস্তির বিধান
অভিবাসন আইনের অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে নতুন শাস্তি আরোপের পরিকল্পনাও নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অপরাধের রেকর্ড থাকা কোনো অভিবাসী যেন সহজে স্থায়ী আবাসন না পায়—এ নিয়ে আরও কঠোর মানদণ্ড তৈরি করা হবে।
সামাজিক সুবিধায় প্রবেশাধিকার হবে সীমিত
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ভবিষ্যতে ব্রিটিশ নাগরিকরাই কেবল রাষ্ট্রীয় সুবিধা ও সামাজিক আবাসনের জন্য যোগ্য হতে পারেন। অর্থাৎ, কঠিন শর্ত পূরণ করে স্থায়ী আবাসন পেলেও সামাজিক সুবিধা পাওয়া যাবে না স্বয়ংক্রিয়ভাবে—এর জন্য ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অর্জন করতে হবে।
২০ লাখ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে নতুন নীতি
২০২১ থেকে যুক্তরাজ্যে আসা প্রায় দুই মিলিয়ন অভিবাসীর ওপর নতুন শর্ত প্রযোজ্য হতে পারে। তবে যারা ইতিমধ্যে স্থায়ী আবাসন পেয়েছেন, তারা প্রভাবমুক্ত থাকবেন।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, অভিবাসন বৃদ্ধির ধারায় আগের নিয়ম অনুসারে ১.৬ মিলিয়ন মানুষ ২০৩০ সালের মধ্যে সেটেলমেন্টের পথে থাকতেন—নতুন ব্যবস্থায় সেই প্রবাহে বড় পরিবর্তন আসবে।
‘চার স্তম্ভে দাঁড়ানো’ নতুন মডেল
সরকার যে ‘Earned Settlement’ কাঠামো প্রস্তাব করেছে তার ভিত্তি চারটি—
চরিত্র, সংহতি, অবদান ও বসবাসকাল।
এই চার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ না হতে পারলে স্থায়ী আবাসনের সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। চাকরিতে থাকা, উচ্চমানের ইংরেজি দক্ষতা, অপরাধমুক্ত রেকর্ড ও রাষ্ট্রীয় সুবিধার ওপর নির্ভর না করা—এসব হবে বাধ্যতামূলক শর্ত।
শরণার্থীদের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধি
নতুন আশ্রয় নীতিতে বৈধভাবে আগত শরণার্থীদের জন্য স্থায়ী হওয়ার সময়সীমা ২০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তাদের রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাওয়ার অধিকার বহাল থাকবে।



