হিরো অফ দি ডে

পণ্য সম্পর্কে জেনে ব্যবসা করলে লাখপতি হওয়া যায় : শারমিন

off‘আমার স্বপ্ন ছিল ব্যাংকার হব, কিন্তু হয়েছি উদ্যোক্তা। আর উদ্যোগ নিয়ে যেভাবে সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছি, নিজের নাম তৈরি করতে পারছি; আত্মপরিচয় হয়েছে—তা চাকরি করলে কখনো হয়তো হতো না। তাই উদ্যোক্তা হিসেবে আনন্দিত ও গর্বিত আমি,’ বলছিলেন দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম বড় প্ল্যাটফর্ম উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) সদস্য ও ইনোভেন্টিক ফ্যাশনের কর্ণধার শারমিন সাঈদ। সম্প্রতি  শারমিন সাঈদ বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুতে কেউ তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেনি। কিন্তু পরে ফ্যামিলির ফুল সাপোর্ট পেয়েছি। কিন্তু সবচেয়ে বড় সাপোর্ট ছিলেন রাজিব আহমেদ স্যার। তিনি সরাসরি হয়তো কখনো বলেননি, কিন্তু যতবার হতাশায় আক্রান্ত হয়েছি, ততবারই মোটিভেট করেছেন বিভিন্ন ভাবে। স্যারের কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ।’

শারমিন সাঈদ জানান, তাঁর ব্যস্ততা এখন ইনোভেন্টিক ফ্যাশন ও সন্তানকে নিয়ে। তাঁর ছেলের বয়স মাত্র ১৩ মাস। ছেলের যখন তিন মাস বয়স, তখন তাঁর উদ্যোক্তার যাত্রা শুরু হয়। যদিও ইনোভেন্টিক ফ্যাশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল দুই বছর আগে, কিন্তু ই-কমার্স নিয়ে তেমন ভালো আইডিয়া না থাকায় এবং ভালো সোর্সিংয়ের অভাবে ব্যবসা চালাতে পারছিলেন না। শুরুতে ব্লক নিয়ে কাজ করলেও সন্তানের জন্য ব্লকের কাজ করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। তারপর ছয় মাস আগে তাঁতের পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাঁতের শাড়ি, থ্রি-পিস এবং জামদানি শাড়ির ওপর এখন মনোযোগ তাঁর।

তো, এখন কেমন সাড়া পাচ্ছেন? উত্তরে শারমিন সাঈদ বলেন, ‘বর্তমানে খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। মাত্র সাত হাজার টাকা নিয়ে ইনোভেন্টিকের যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং সেই টাকাটাও আম্মুর কাছ থেকে ধার করা ছিল। বর্তমানে আলহামদুলিল্লাহ, ইনোভেন্টিকের পণ্য এ পর্যন্ত ২৭টি জেলায় পৌঁছেছে।’

উদ্যোক্তা-জীবনে উই-এর ভূমিকা অনেক। শারমিনের ভাষায়, ‘দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির বড় প্ল্যাটফর্ম উই-এর হাত ধরেই আমার উদ্যোক্তা-জীবন শুরু। এমন অনেক নারী আছেন, যাঁদের পরিবারের সাপোর্ট নেই। তাঁরাও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য উইকে সাপোর্ট হিসেবে পেয়েছেন। সত্যি বলতে, আমার মতো হাজারও নারীর উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে, তাঁদের স্বপ্ন পূরণের পেছনে উই-এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। উই ‘বাই সেল’ গ্রুপ না হওয়া সত্ত্বেও শুধু পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মপরিচয় তৈরি করতে পারছি এর কল্যাণে। এমনকি আমাদের বিনামূল্যে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়ে আমাদের উদ্যোগকে, দেশের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য-পণ্যগুলোকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করার সুযোগ করে দিচ্ছে উই। এ জন্য উই-এর প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার নিশা আপু এবং রাজিব স্যারের কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। নিশা আপু এবং রাজিব স্যারের নিরলস প্রচেষ্টায় উই এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সব ধরনের পণ্য; এমনকি শুধু দেশের হারিয়ে যাওয়া পণ্যই নয়, একজন নারী পরিবার ও সমাজের প্রতিবন্ধকতা দূর করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখতে পারে, সেই স্বপ্ন পরিপূর্ণ করতে পারে।’

শারমিন এখন কাজ করছেন তাঁতের শাড়ি, থ্রি-পিস এবং জামদানি শাড়ি নিয়ে। তাঁত পণ্যকে ফোকাস করছেন। এ ছাড়া জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য তিনি মুন্সিগঞ্জের ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিজাতীয় খাবার নিয়ে কাজ করছেন। সেটা শুধু শীত মৌসুমে করছেন এবং এ থেকে তাঁর আয় হয়েছে এক মাসে ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া উই গ্রুপে তাঁর পণ্য বিক্রি হয়েছে দুই লাখ টাকার বেশি।

উদ্যোক্তা হওয়ার পর মধুর স্মৃতি? এমন প্রশ্নের জবাবে শারমিন সাঈদ বলেন, ‘প্রতিটি রিভিউ প্রাপ্তির স্মৃতিই আমার কাছে মধুর। তবে ইনোভেন্টিকের একটি তাঁতের জামদানি মোটিফের কালো ড্রেস আছে, যেটার নাম দিয়েছি—জাতীয় ড্রেস। তার কারণ, মূলত এটি ১০০ পিস সেল করেছি এবং এটি আমাকে লাখপতির দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। এই ড্রেসের যতগুলো রিভিউ পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভালো লেগেছে। একজন ক্রেতা, যিনি এই ড্রেস পরে আমাদের মেন্টর রাজিব স্যারের কাছ থেকে পুরস্কার নিয়েছিলেন—যদিও তিনি পুরস্কারটা অন্য কারণে পেয়েছেন— আমাকে তিনি খুব খুশি হয়ে যখন বললেন, এটা তাঁর লাকি ড্রেস, তখন সবচেয়ে ভালো লেগেছে।’

এমন আরো সংবাদ

Back to top button