স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে সফল ‘ডাক্তার আপা’ মরিয়ম বেগম
মরিয়ম বেগম প্রশিক্ষিত ট্র্যাডিশনাল বার্থ অ্যাটেনডেন্ট (টিবিএ) হিসেবে ৪০ বছর ধরে কমিউনিটি পর্যায়ে সেবা প্রদান করে আসছেন। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার চোকরদা ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা মরিয়ম ১৫ বছর বয়সে স্বল্প বেতনের একজন কর্মচারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি খুব অল্প বয়স থেকে গ্রামের দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা ও সন্তান প্রসবকারী নারী, যাঁরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত, তাঁদের সেবা প্রদানে সর্বদা সহানুভূতিশীল এবং সক্রিয় ছিলেন।
মরিয়মের গ্রামে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন এবং স্বনির্ভরতার ধারণা প্রায় ছিল না বললেই চলে। তিনি ২০১৬ সালে এসএমসির গোল্ড স্টার নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত কমিউনিটি সেলস এজেন্টদের (বর্তমানে গোল্ড স্টার মেম্বার হিসেবে পরিচিত) একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে তিনি স্বাস্থ্য বার্তাগুলো প্রচার এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পণ্যসমূহের বিক্রয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং পণ্যের ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তিনি তাঁর জনহিতকর কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নিজেকে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।
মরিয়ম এসএমসির কাছ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকার স্বাস্থ্যবিষয়ক পণ্য কিনে তাঁর নতুন ব্যবসা শুরু করেছিলেন এবং তাঁর নির্ধারিত এলাকার মধ্যে বিক্রি করতে শুরু করেন। প্রথম মাসেই তিনি এই ব্যবসায় লাভজনক ফল দেখতে পেয়েছিলেন এবং বর্তমানে তাঁর মাসিক বিক্রয় ১০ হাজার ৫০০ টাকা এবং মুনাফা আড়াই হাজার টাকা। তিনি গর্ভধারণের সঠিক সময় এবং বিরতি, শিশুর জন্মের এক হাজার দিনের যত্ন যথা গর্ভকালীন যত্ন, নিরাপদ প্রসব, সন্তানের জন্ম, জন্মপরবর্তী যত্ন, শিশুকে বুকের দুধ পান করানো, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট পাউডার, ওরস্যালাইন এবং শিশুর ডায়রিয়ায় জিঙ্কের ব্যবহার, পরিবার-পরিকল্পনার দীর্ঘমেয়াদি এবং স্থায়ী পদ্ধতি ও যক্ষ্মাবিষয়ক রেফারেল সেবা এবং কিশোর-কিশোরীদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচার করেন।
মরিয়ম তাঁর ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের কারণে কিশোরী এবং যুবতী নারীদের কাছে ‘ডাক্তার আপা’ নামে সুপরিচিত।
পরিবার ও সমাজে নিজের অবস্থান সম্পর্কে বলতে গিয়ে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আমি সত্যিই আমার কাজটি উপভোগ করি এবং আমার ব্যবসা চালিয়ে যেতে আমার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে আন্তরিক সমর্থন পেয়েছি। সন্তানদের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত পারিবারিক বিষয়গুলো নিয়ে আমরা এখন সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিই, যা আমি আগে কখনো করতে পারিনি। এসএমসির জনস্বাস্থ্যবিষয়ক পণ্যসমূহের মাধ্যমে সমাজের মানুষকে সেবা প্রদানের পাশাপাশি আমার ব্যবসাকে প্রসারিত করে আরো সাফল্য অর্জন করতে চাই।’
মরিয়ম প্রমাণ করেছেন স্বপ্ন দেখতে এবং একে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে কেউ দৃঢ় প্রত্যয়ী হলে কোনো সীমাবদ্ধতাই তাঁকে থামাতে পারে না।