কয়েকদিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় স্থবির দেশের উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। শীতের দাপট বেড়েছে উত্তরের বিভিন্ন জেলায়। বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট অবর্ণনীয়। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ শীতার্ত মানুষের।
কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের মধ্যেই জীবিকার তাগিদে কর্মস্থলে ছুটছেন দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষ। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এদের বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। রংপুর বিভাগের প্রায় সব জেলাতেই জেঁকে বসেছে শীত। কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ১০ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি শাহজাহান সিরাজ মিঠু জানিয়েছেন, কুয়াশা ও কনকনে হিমেল বাতাসে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাটে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এ অবস্থায় জেলায় জেঁকে বসেছে শীত। জেলা ও জেলার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে বইছে মৃদ্যু শৈত্য প্রবাহ। ফলে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যাচ্ছে না।
তবে শীতের তীব্রতা বাড়ায় দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ পড়েছে দুর্ভোগে। এই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ও শীতের মধ্যেই জীবিকার তাগিদে কর্মজীবী দরিদ্র মানুষকে তাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে।
এ দিকে শীতের তীব্রতায় জেলায় ঠান্ডা ও শীতজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। সরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অন্য দিকে শীত বাড়ায় শহরের রেল লাইনের পাশে বসা হকার্স মার্কেটের পুরোনো শীতবস্ত্রের (গরম কাপড়ের) দোকানগুলোতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে।
এ ছাড়া মৌলভীবাজার প্রতিনিধি এস এম উমেদ আলী জানিয়েছেন, সেখানেও বইছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। টানা কয়েকদিন মৃদু থেকে মাঝারি শৈত প্রবাহ অব্যাহত থাকায় জেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আজ রোববার সকাল ৯টায় জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারণে হাওরপাড় ও চা বাগান এলাকার শ্রমজীবী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। রাস্তায় যানবাহনগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। শীতের কারণে জেলার নিম্ন আয়ের মানুষেরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দিনে ও রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে অনেকেই।
মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বাড়ছে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান জানান, মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। ঘন কুয়াশা কেটে গেলেও শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। শীতের এ অবস্থা আরো কয়েকদিন থাকবে বলে জানান তিনি।