নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব সত্ত্বেও সাংহাইয়ের বৈদেশিক বিনিয়োগ চলতি বছর রেকর্ড শীর্ষে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, এ তহবিলের পরিমাণ ২ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি হতে পারে। এক্ষেত্রে শহরটিতে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ মূল ভূমিকা পালন করেছে। পাশাপাশি আরো বিদেশী সংস্থার আগমন সাংহাইকে এশিয়ার ব্যবসায়িক তীর্থস্থানে পরিণত করছে। বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড লুই ভিঁতো তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চীনা বাজারে ব্যবসা করছে। ফ্রান্সের এ সংস্থা কেবল সাংহাইয়ে প্রায় ১৬০টি বুটিক স্থাপন করেছে, যা চীনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা। সংস্থাটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানে সংস্থাটির দুই অংকের উপার্জন কমে গেছে। তবে চীন বিশেষত সাংহাইয়ের বাজারে সংস্থাটির ব্যবসা বড় হয়েছে। লুই ভিঁতোর গ্রেটার চায়না গ্রুপের সভাপতি অ্যান্ড্রু ওউ বলেন, আমাদের গ্রুপের জন্য ব্যবসা পুনরুদ্ধারে সাংহাই অন্যতম দ্রুততম স্থান।
সাংহাই কেবল চীনের অন্যান্য শহরের সঙ্গে নয়; প্যারিস, লন্ডন ও নিউইয়র্কের মতো শহরের সঙ্গেও প্রতিযোগিতা করছে। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে প্রচুর গ্রাহক নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক ফ্যাশন শহরে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বের বড় বড় সংস্থার প্রধান কার্যালয় চলে যাচ্ছে জনসংখ্যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর সাংহাইয়ে। অস্ট্রিয়ান অটোমেশন সংস্থা বিঅ্যান্ডআর সেখানে ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম তৈরি করেছে। অ্যাসেম্বল ও প্যাকেজিংয়ে ব্যবহূত দুই কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত এ সিস্টেম ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন ব্যাটারি নির্মাতা থেকে শুরু করে গাড়ি নির্মাতারা পর্যন্ত সংস্থাটির প্রধান গ্রাহক।
বিঅ্যান্ডআর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন গ্রেটার চীনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াও ওয়েরং বলেন, মূল শহর হিসেবে সাংহাইয়ের প্রভাব খুব প্রবল। এখানেই রয়েছে অনেক উন্নত অবকাঠামো ও রসদ। সাংহাইয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন এবং নিকটবর্তী শহরগুলোয় কারখানা স্থাপন আমাদের ব্যবসার জন্য অনুকূল হতে পারে।
তিনি বলেন, সাংহাইয়ে অনেকগুলো বৈশ্বিক সদর দপ্তর রয়েছে। এটি আমাদের গ্রাহক ও পেশাদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। আমাদের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (এআই), সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দক্ষ কর্মীদের প্রয়োজন হয়। আর সাংহাই আমাদের এ ধরনের সব প্রয়োজন সরবরাহ করে।
গত বছরের প্রথম ১১ মাসে ৪৭টি বিদেশী সংস্থা সাংহাইয়ে আঞ্চলিক সদর দপ্তর স্থাপন করেছিল এবং ২০টি সংস্থা শহরটিতে এশিয়ার সদর দপ্তর স্থাপন করেছিল। এর বাইরে ১৮টি সংস্থা সেখানে তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।
স্থিতিশীল স্নোবলিং প্রবৃদ্ধির কারণে সংহাই বেশির ভাগ বিদেশী বিনিয়োগকারীর জন্য চীনা মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহরে পরিণত করেছে।
সাংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টরন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক চেন হাও বলেন, বিদেশী উদ্যোক্তাদের জন্য সাংহাই সবচেয়ে অনুকূল শহর হতে থাকবে। চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপো এরই মধ্যে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য একটি অপরিবর্তনীয় প্লাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং চীন-ইইউ বিনিয়োগ চুক্তির মতো কিছু আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরও সাংহাইকে বিদেশী বিনিয়োগে এগিয়ে দিচ্ছে।
বন্দর শহর সাংহাইয়ে এখন ৬০ হাজারেরও বেশি বিদেশী সংস্থার কার্যক্রম চলছে। একদিকে শহরে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ তাদের জন্য একটি শক্ত ভিত তৈরি করে দিয়েছে, অন্যদিকে তাদের আগমনও শহরের বিকাশে অবদান রেখেছে। সাংহাই সরকার জানিয়েছে, বিদেশী সংস্থাগুলো নগরীর জিডিপির এক-চতুর্থাংশ, কর রাজস্বের এক-তৃতীয়াংশ এবং এক-পঞ্চমাংশ কর্মসংস্থানে অবদান রাখে। এটি খুব লাভজনক সম্পর্ক হয়ে উঠেছে। আগামী দিনে এটি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।