এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরি বাজারে এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছিল। টানা তিন মাস ধরে মার্কিন অর্থনীতিতে পুরুষদের চেয়ে বেশি চাকরি ধরে রেখেছিল নারীরা। এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ এবং ২০১০ এর প্রথমদিকে। যদিও খুব কম সময় স্থায়ী ছিল এ ঐতিহাসিক প্রবণতা। তবে নিশ্চিতভাবেই, কর্মক্ষেত্রে নানা ধরনের লিঙ্গ বৈষম্য ছিল এবং এখনো আছে: পুরুষদের তুলনায় নারীরা সাধারণত খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ কম পান। উদাহরণ হিসেবে, বাড়িতে সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব পালন একটি বড় কারণ। এছাড়া নারীরা পূর্ণকালীন কর্মী হলেও পুরুষদের তুলনায় প্রতি ডলারে গড়ে ৮১ সেন্ট পান নারীরা। এরপরও নারীরা ধীরে ধীরে উপার্জনের পার্থক্য কমিয়ে আনছিলেন। কিন্তু মহামারীটি দ্রুত পরিস্থিতি পাল্টে দেয়। এখন সেটি আরো খারাপের দিকে গেছে।
গত শুক্রবার প্রকাশিত নতুন পরিসংখ্যান অনুসারে, নিয়োগকর্তারা গত ডিসেম্বরে ১ লাখ ৪০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছেন। এতেই বুঝা যায় যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাস মহামারী থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কতোটা পিছিয়ে যাচ্ছে। ওই পরিসংখ্যান আরো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে লিঙ্গ বৈষম্যের একটি চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এক মাসের মধ্যে যে ১ লাখ ৫৬ হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছে, এর মধ্যে সবাই নারী। যেখানে একই সময়ে ১৬ হাজার পুরুষ চাকরি পেয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি পৃথক খানা জরিপে যেখানে স্ব-কর্মসংস্থান খাতের কর্মীরাও অন্তর্ভুক্ত, লিঙ্গ বৈষম্যের আরো বড় ব্যবধানের চিত্র উঠে এসেছে। এই জরিপে আরো বেদনাদায়ক একটি বাস্তবতা উঠে এসেছে: ডিসেম্বরে চাকরি হারানোদের বেশিরভাগ কৃষ্ণাঙ্গ এবং লাতিন। অথচ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্বেতাঙ্গ নারী এই সময় চাকরি পেয়েছেন।
এগুলো হলো নিট পরিসংখ্যান, যা শ্রমবাজারে অন্তর্নিহিত অস্থিরতাকে কিছুটা প্রশমিত করতে পারে। এটা স্পষ্ট যে ডিসেম্বরে অনেক পুরুষ কর্মীও চাকরি হারিয়েছিলেন- তবে যখন নারী-পুরুষকে আলাদা গ্রুপ হিসেবে বিবেচনা করা হবে তখন দেখাই যাচ্ছে যে নারীরা পিছিয়ে পড়ছেন।
অর্থনীতিবিদরা প্রায়শই মাসিক পরিসংখ্যানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন। মাসিক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই তারা সতর্ক করেন। ডিসেম্বরের কর্মসংস্থানের হাল শ্রমজীবীনারী- বিশেষ করে অশ্বেতাঙ্গ নারীদের জন্য একটি ভয়াবহ বছরের ইঙ্গিত বহন করে।
দেখা গেছে, মূলত মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কর্মক্ষেত্রগুলোতেই কাজ করেন কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন নারীরা। এসব কর্মক্ষেত্রে প্রায়শই অসুস্থতাজনিত সবেতন ছুটি কম থাকে এবং বাসা থেকে কাজ করার সুযোগও নেই বললেই চলে। স্কুল এবং দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায়, অনেকের কাজ এবং পিতামাতার দায়িত্ব পালন নিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে ।
উইমেনস পলিসি রিসার্চের প্রেসিডেন্ট ও সিইও সি নিকোল ম্যাসন বলেন, এই কর্মক্ষেত্রগুলোতে কাজের ক্ষেত্রে নমনীয়তা কম থাকে। সুতরাং যখন নিয়োগকর্তা অনমনীয় থাকেন বা বাড়িতে বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য নারীরা কাজে আসতে পারেন না তখন শেষ পর্যন্ত সেই নারীকে কাজটি ছেড়ে দিতে হয়।
সামগ্রিকভাবে, মহামারী শুরু হওয়ার আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৪ লাখ নারী চাকরি হারিয়েছে, পুরুষ হারিয়েছে ৪৪ লাখ। অথচ ২০২০ সালটি তারা শুরু করেছিলেন সমান তালে: চাকরি বাজারের ৫০ দশমিক ০৩ শতাংশই দখলে ছিল নারীদের। তবে বছর শেষে পুরুষদের তুলনায় নারী কর্মীর সংখ্যা ৮ লাখ ৬০ হাজার কমে গেল।
মূলত তিনটি খাতে কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণেই এই ব্যবধানটি বেড়েছে: শিক্ষা- যা সবসময়ই নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ শিল্প, হসপিটালিটি এবং খুচরা বাজার- বিশেষত পোশাক অ্যাকসেসরিজ দোকান। এই শিল্পখাতগুলো মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।