ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইস্পিড রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। এজন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পর চীন ও বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে রেলপথটির বিস্তারিত নকশাও তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে রেলপথটি নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান। চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআরসিসি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে রেলপথটি নির্মাণের প্রস্তাব করেছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইস্পিড রেলপথটি নির্মাণ করতে চায় চীনের নির্মাণ খাতের প্রতিষ্ঠান সিআরসিসি ও সিসিইসিসি। বাংলাদেশের চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান দুটি এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে সরকারের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির কাছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মতামত চাওয়ার জন্য এ প্রস্তাবটি বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি।
বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত হাইস্পিড ট্রেন নির্মাণের জন্য ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে করা হয়েছে রেলপথটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, যাতে খরচ হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। সমীক্ষায় হাইস্পিড রেলপথটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৪০ কোটি ডলার (শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম অংশ)। বর্তমান বিনিময় হারে (প্রতি ডলারে ৮৪ টাকা ৮৭ পয়সা) এর পরিমাণ ৯৬ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এ বিনিয়োগের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন (এফআইআরআর) ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর ইকোনমিক ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন (ইআইআরআর) ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ।
হাইস্পিড রেলপথটি নির্মাণ করা হবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম রুটে। রুটটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২২৭ কিলোমিটার। রেলপথটি হবে শুধু যাত্রী পরিবহনের জন্য। ডিজাইন স্পিড ধরা হয়েছে প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার। স্ট্যান্ডার্ড গেজের দুটি লাইন নির্মাণ করা হবে, যেগুলোর এক্সেল লোড হবে ১৭ টন ধারণক্ষমতার। বিদ্যুচ্চালিত রেলপথটি হবে পাথরবিহীন। ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক ‘অটোমেটিক ব্লক’ সিগন্যাল ব্যবস্থা। রেলপথটিতে একটি ট্রেন বিরতিহীনভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে সময় নেবে ৫৫ মিনিট। আর বিরতি দিয়ে চললে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছতে সময় লাগবে ৭৩ মিনিট। দিনে প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে হাইস্পিড রেলপথটি দিয়ে।
চীনের দুটি কোম্পানি পিপিপির মাধ্যমে নির্মাণের প্রস্তাব করলেও হাইস্পিড রেলপথটির অর্থায়ন পদ্ধতি এখনো চূড়ান্ত করে উঠতে পারেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টাকার অংকে এটি হবে দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা কঠিন। বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চাইলে হাইস্পিড রেলপথটির ‘সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. কামরুল আহসান বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশার কাজগুলোই করছি। অর্থায়ন বা বিনিয়োগের বিষয়ে আমরা কোনো কাজ করছি কিনা। এমনকি প্রকল্প পিপিপি বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে হবে—তা-ও ঠিক হয়নি।
বর্তমানে রেলপথটির নকশা তৈরির কাজ চলমান আছে। প্রকল্প পরিচালক ড. কামরুল আহসান জানিয়েছেন, নকশা প্রণয়ন কাজের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত থাকলেও তা এরই মধ্যে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আগামী মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত নকশা তৈরি হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। চীনের ‘চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন’ (সিডিআরসি) ও বাংলাদেশের ‘মজুমদার এন্টারপ্রাইজ’ বিশদ নকশা প্রণয়নের কাজ করছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ নির্মাণে বিনিয়োগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, এটা অনেক টাকার প্রকল্প। বিদেশী সাহায্য ছাড়া আমাদের পক্ষে বাস্তবায়ন করা কঠিন। বিনিয়োগের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে যাচ্ছি।
মন্ত্রী আরো বলেন, হাইস্পিড রেলপথের সঙ্গে আরো কিছু বিষয় জড়িত। রেলপথটিতে যেসব ট্রেন চলাচল করবে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা ওয়ার্কশপ লাগবে। দক্ষ জনবলও লাগবে। রেলপথটি যেহেতু এলিভেটেড হবে, সেহেতু কমলাপুরের সঙ্গে এর সংযোগটি নিয়েও বিশদ পরিকল্পনার প্রয়োজন। হাইস্পিড ট্রেনের বিষয়টা মাথায় রেখে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সব কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।