চতুর্থবারের মতো মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার হিসেবে নিজের পদ সুরক্ষিত রেখে আবারো সংবাদের শিরোনাম হয়েছে ন্যান্সি পেলোসি। ফলে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে তার ৫০ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে আরো একটি নতুন মাইলফলক অর্জিত হলো। তবে সম্ভবত তার আসল চ্যালেঞ্জটা এখনো সামনে অপেক্ষমাণ। বিশেষ করে কমলা হ্যারিস দেশের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সবচেয়ে ক্ষমতাবান নারীর তকমা হারালেন পেলোসি। কিন্তু এর পরও ৮০ বছর বয়সী এ নারী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। নিম্নকক্ষে সংকুচিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন তিনি। যেখানে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধিতাকেও জয় করতে হয়েছে তাকে।
রিপাবলিকানরা সাধারণত পেলোসিকে দেখেন সানফ্রান্সিসকোর উদারনৈতিক রাজনীতিবিদ হিসেবে যিনি সবসময় বৃহৎ সরকারগুলোর মোহে আবিষ্ট হয়ে থাকেন। তবে তার শিকড় মহাদেশের অন্য প্রান্তের ভিন্ন এক রাজনৈতিক স্টাইলের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বড় হয়েছেন একটি রাজনৈতিক পরিবারে। বাল্টিমোরের পূর্ব উপকূলীয় শহরের সাত ভাই-বোনের সবচেয়ে ছোটজন হিসেবে বেড়ে উঠেছেন। তার বাবাও ছিলেন একজন মেয়র।
তিনি ওয়াশিংটনের একটি কলেজে পড়তে যান এবং সেখানে তার ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী পল পেলোসির সঙ্গেও দেখা হয় তার। এরপর তিনি প্রথমে ম্যানহাটনে এবং পরে সানফ্রান্সিসকো স্থানান্তরিত হন। যেখানে তিনি পাঁচ সন্তানের জননী হিসেবে একজন গৃহিণীর দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু এখানেই থেমে যেতে চাননি তিনি।
১৯৭৬ সালে রাজনীতির সঙ্গে প্রথম সম্পৃক্ত হন তিনি। নিজের পুরনো পারিবারিক রাজনৈতিক সংযোগকে ব্যবহার করে সাহায্য করেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর জেরি ব্রাউনকে। এরপর রাজ্যের ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার প্রধান হওয়ার পর ১৯৮৮ সালে কংগ্রেসে আসনও জিতে নেন।
তিনি তার মতো করে নিজের পথ তৈরি করেছেন। পেলোসি শুরু থেকেই এইডস গবেষণা তহবিল বাড়ানোর ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে তিনি। তার এ অবস্থান গ্রহণের সুফল আসে ২০০৭ সালে। যখন ডেমোক্র্যাটরা ১২ মাঝে প্রথমবারের মতো হাউজের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তিনি দলের পক্ষ থেকে হাউজের স্পিকার নির্বাচিত হন, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। চার বছর পর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে ডেমোক্র্যাটরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে পড়ার পরও হাল ছাড়েননি পেলোসি। নিজের র্যাংকের ভেতরই চলতে থাকে তার লড়াই। ২০১৮ সালে এসে আবারো হাউজের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে তার হাতে।
২০১৮ সালে স্পিকারের চেয়ারে বসার পর বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাকে। তাকে এ সময় রিপাবলিকানদের রোষের মুখেও পড়তে হয়। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারণার তার উদারনৈতিক এজেন্ডাগুলোকে বারবার সামনে আনার চেষ্টা করে প্রতিপক্ষ। কিন্তু সেগুলো শেষ পর্যন্ত কোনো কাজে আসেনি। শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটরা হাউজে ঐতিহাসিক এক বিজয় অর্জন করে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারের অধীনের নিজের কাজগুলো ঠিকঠাক সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি। তবে এবার দায়িত্ব নিয়ে সবার আগে মহামারী নির্মূলে ভূমিকা রাখতে চান তিনি। বিবিসি অবলম্বনে