প্রযুক্তি

বিপত্তিতে কয়েক মিলিয়ন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী

app২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পুরনো মডেলের কয়েক মিলিয়ন অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ সমর্থন বন্ধ হবে। এমন সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিল হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গত শুক্রবার থেকে সেকেলে অপারেটিং সিস্টেমচালিত কয়েক মিলিয়ন ফোনে হোয়াটসঅ্যাপের সমর্থন বন্ধ হতে শুরু করেছে। এ বিপুলসংখ্যক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী এখন কী করবেন? বৈশ্বিক সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক নিয়ন্ত্রিত হোয়াটসঅ্যাপ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রস-প্লাটফর্ম মেসেজিং এবং ভয়েস ওভার আইপি সেবাদাতা প্লাটফর্ম। বিশ্বজুড়ে ২০০ কোটির বেশি মানুষ স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং ওয়েবে সেবাটি ব্যবহার করেন। বৈশ্বিক ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং বাজারের ৪৪ শতাংশ এখন হোয়াটসঅ্যাপের দখলে। হোয়াটসঅ্যাপে নিরাপদ যোগাযোগের জন্য রয়েছে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন প্রযুক্তি সমর্থন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু সেকেলে বা অত্যন্ত পুরনো ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরাই ভুক্তভোগী হবেন না। অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মের ক্ষেত্রে ৪.০.৩-এর আগের অপারেটিং সিস্টেমচালিত কোনো স্মার্টফোনে হোয়াটসঅ্যাপ চলবে না। অন্যদিকে আইওএস প্লাটফর্মের ক্ষেত্রে আইওএস ৯-এর আগের অপারেটিং সিস্টেমচালিত কোনো আইফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা যাবে না।

ফেসবুক টানা কয়েক বছর ধরে তাদের অ্যাপ পরিবারের নিরাপত্তা জোরদারের চেষ্টা চালাচ্ছে। গত বছর আইওএস ৮ ও অ্যান্ড্রয়েড ২.৩.৭ সংস্করণে ফেসবুক অ্যাপের সমর্থন বন্ধ করা হয়েছিল।

হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ গত বছর ফেব্রুয়ারিতে আইওএস ৮ কিংবা এর আগের সংস্করণচালিত আইফোনে হোয়াটসঅ্যাপ সমর্থন বন্ধ করেছিল। আইওএস ৮ কিংবা এর আগের সংস্করণচালিত আইফোনের মাধ্যমে নতুন হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট সৃষ্টি করা এবং ভেরিফিকেশনের সুবিধা বন্ধ করা হয়েছিল আরো আগেই। একইভাবে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ২.৩.৭ কিংবা এর আগের সংস্করণচালিত ডিভাইসের জন্যও হোয়াটসঅ্যাপ সমর্থন পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সব ধরনের উইন্ডোজ ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজিং সেবা বন্ধ করা হয়েছিল।

হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের ভাষ্যে, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে তারা সেকেলে অপারেটিং সিস্টেমচালিত পুরনো ফোনে ক্রমান্বয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা বন্ধ করছে। ব্যবহারকারীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে আগেই সতর্ক করার পরও যারা পুরনো মডেলের স্মার্টফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছিলেন, তারা সেবাটি ব্যবহারের সুযোগ হারাবেন। সিদ্ধান্তটি কোনো একক প্লাটফর্মের জন্য নয়। আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড কিংবা উইন্ডোজ ফোন, সব প্লাটফর্মের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।

২০১৪ সালে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে হোয়াটসঅ্যাপ অধিগ্রহণ করেছিল সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক। এর দুই বছর আগে ২০১২ সালে শতকোটি ডলারে ছবি শেয়ারিংয়ের প্লাটফর্ম ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটি। অধিগ্রহণের পর এ দুই সেবাকে ফেসবুকের সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এবং মেসেজিং সেবা পরিবারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণে খুব অল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম। মেসেজিং সেবা দুটির গ্রাহক বাড়তে থাকে দ্রুত। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে পুরনো অপারেটিং সিস্টেমচালিত ফোনে সমর্থন বন্ধ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ফেসবুক বেশ কিছুদিন ধরেই মেসেজিং সেবায় জোর দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের শুরুর দিকে হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম মেসেজিং সেবাকে ফেসবুকের মূল কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে সবগুলো মেসেজিং সেবায় ইনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহারের ঘোষণা দেয়।

ওই সময় ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ বলেন, মেসেজিং সেবার গ্রাহক দ্রুত বাড়ছে। যে কারণে সেবাগুলো আরো ব্যবহারকারীবান্ধব এবং সহজ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার আগের চেয়ে আরো সহজ ও অর্থবহ হবে।

ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে হোয়াটসঅ্যাপ। দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজের সমাধানে বিপুলসংখ্যক মানুষ এখন সেবাটির মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছে। হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালে পুরনো মডেলের ফোনে ক্রমান্বয়ে সমর্থন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। এর পরও অসংখ্য মানুষ পুরনো ডিভাইসে সেবাটি ব্যবহার করছে। পুরনো মডেলের ডিভাইসে হোয়াটসঅ্যাপ সমর্থন বন্ধ হতে শুরু করায় কয়েক মিলিয়ন ব্যবহারকারী বিপত্তিতে পড়বে। কারণ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের জন্য তাদের ডিভাইস আপগ্রেড করতে হবে, যা তাত্ক্ষণিকভাবে সবার পক্ষে সম্ভব নয়।

সংবাদ উৎস
বিজনেস ইনসাইডার

এমন আরো সংবাদ

Back to top button