জেলার খবরহাইলাইটস

সহকারী প্রধান শিক্ষক এখন হোটেল বয়

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস

valo sangbadজয়পুরহাট: এক সময়ের জনপ্রিয় শিক্ষক রইচ উদ্দিন। নিজ হাতে শিক্ষা দিয়েছেন বহু ছাত্র-ছাত্রীকে। তারা এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই শিক্ষক আজ হোটেল বয়। জয়পুরহাট শহরের একটি হোটেলে তিনি এই কাজ করছেন। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি।
শিক্ষক রইচ উদ্দিন জানান, কানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রইচ উদ্দিন ওরফে টিপু গত ২০১৮ সালের ২৪ মে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেন। অর্থ সম্পদ তেমন না থাকলেও চাকুরী জীবনে বেশ কিছু সঞ্চয়ও করেছিলেন। তিনি কয়েক বছর আগে বিদ্যালয় থেকে বাই-সাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দূর্ঘনায় তার বাম পা ভেঙ্গে যায়। চিকিৎসায় খরচ করেন জমানো সঞ্চয়ের সব টাকা। শুধু তাই নয় নিজের বসত ভিটা পর্যন্ত বিক্রয় করতে হয় তাকে। শারীরিকভাবে সুস্থ্য হলেও এক পা ছোট আর এক পা বড় হয়ে যায়, এতে খুরিয়ে হাঁটতে হয় তাকে। অবসর গ্রহনের পর কর্মের জন্য পারি জমান রাজধানী ঢাকায়। চাকরী নেন একটি পলিথিন কারখানায়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য সেখানে বেশি দিন চাকুরী করতে পারেনি তিনি। নিরাশ হয়ে ফিরতে হয় নিজ এলাকায়। জীবন জীবিকা চালাতে হোটেল বয় হিসাবে কাজ নেন জয়পুরহাট শহরের রেড প্লেস নামক চাইনিজ হোটেলে। খাবারের প্লেট ধোয়া, টেবিলে পানি দেওয়া, গ্লাস পরিষ্কার, টিস্যু পেপার সরবরাহ করা তার কাজ। এ কাজে তিনি প্রতিদিন ১০০ টাকা পারিশ্রমিক পান। পরিবারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি স্ত্রীসহ রয়েছে দুইটি কন্যা সন্তান। অর্থের অভাবে ভর্তি করাতে পারেননি কোন স্কুলে। জয়পুরহাট শহরের বিশ্বাস পাড়া এলাকায় ৯০০ টাকায় ভাড়া দিয়ে খুপরি একটি ঘরে বসবাস করছেন এক সময়ের জনপ্রিয় শিক্ষক রইচ উদ্দিন ওরফে টিপু।
তার স্ত্রী জয়নব খাতুন বলেন, ‘এক সময় সংসারে অনেক কিছু ছিল। স্বচ্ছল সংসারে ভালই সুখে শান্তিতে দিন পার করেছি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। এখন আমরা নিঃস্ব। সন্তানদের ভাল খাওয়াতে পারিনা, ছেঁড়া কাপড় পরিয়ে রেখেছি তাদের। এক বেলা খাওয়া হলেও অন্য বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারিনা’।
কানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘তিনি একজন দায়িত্ববান শিক্ষক ছিলেন। ২০১৮ সালের মে মাসে অবসর নিলেও অবসর ও কল্যাণ তহবিলের টাকা উত্তোলনের ফাইল প্রস্তুত করতে তিনি বিলম্ব করেন। আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে দ্রুত ফাইল প্রস্তুত করে পাঠিয়েছি। তার এমন অবস্থা সত্যিই দুঃখজনক’।
জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আমি অবগত হয়েছি। তার অবসরের টাকা অতি দ্রুত পাওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেব। শিক্ষক সমাজকে তার পাশে এগিয়ে আসা উচিত’।

 

 

 

সম্পাদনা
এস এম শফিকুল ইসলাম

এমন আরো সংবাদ

Back to top button