মনে পড়ে গেল আবছা স্মৃতি। বয়স আমার তখন চার বছর। আমার জীবনের প্রথম একজন লজিং টিচার ছিলেন, বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বাড়ির সব ছাত্রকে পড়াতেন উনি। পুরান ঢাকায় বেশীর ভাগই তখন লজিং সিস্টেম। এবং অধিকাংশ টিচার ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার। নতুন নতুন ঢাকায় এসেছেন। তার কাছে কিছুটা অপরিচিত ধরনের খাবার, সমাজ ব্যবস্থা আর গ্রামের তুলনায় আলো ঝলমলে ঢাকা দেখে ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা উনার। বাখরখানি রুটি উনি খেতে পারতেন না। সকালে ভাত উনার চাই! মজার বিষয় ঢাকায় বাখরখানীর দোকানের ৯০ ভাগ কারিগর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। যেমন ঢাকার অধিকাংশ ছোট ছোট বিরিয়ানি দোকানের মালিক-কারিগর বরিশালের। এবং বেশীর ভাগ নায়িকা বৃহত্তর খুলনা যশোরের দিকের! খেয়াল করেছেন কি কখনো? ধরিয়ে দিলাম সূত্র আর কি!
সে যা হোক, কিছু নিয়ে বেশী অবাক হলে বা বিরক্ত হলে স্যার বড় ছাত্রদের বলতেন, “আমি বাঙ্গাল বইলা আমারে হাইকোর্ট দেখাও?!”
বাবা-চাচাদের সহযোগীতা আর চেস্টায় আমাদের আয়েশী টাইপের সেই স্যার তিন বছর পর চাকুরী পেয়ে যান সরকারী কোনো এক ব্যাঙ্কে।
পুরনো ঢাকার কালচার ছিলো, আল্লাহর পর শিক্ষকের স্থান। অনেক সন্মানিত, বাবা-মায়েরও আগে। কারন ঢাকাইয়ারা স্কুলে পড়া শিক্ষিত ছিলেন খুব কম।
চাকরী পেয়ে বিয়ে করে বউ নিয়ে কদিন থেকেছেন আমাদের বাড়িতে। তারপর আর কোনো খোঁজ পাইনি। জানি না স্যার আজ কই।
আজ পাঠাও চালকের হাইকোর্ট চেনানোর এক আওয়াজের টাইম মেশিন পৌছে দিয়েছিলো কয়েক যুগ আগে।
কথা প্রসঙ্গে জানলাম, উনিও লজিং থাকেন মিরপুরের কোথাও।
ঢাকার সব ল্যান্ডমার্ক অবাক দৃস্টিতে দেখতে দেখতে উনি আমাকে গন্তব্যে পৌছে দিলেন।
কুস্টিয়ার সদ্য তরুনটি হয়তো জানে না, এ কঠিন নগরীতে সত্যিকারের হাইকোর্ট অপেক্ষা করছে…
তার জন্য শুভকামনা।