হিরো অফ দি ডে

মুদ্রা প্রেমিক ওয়ালিউল্লাহর অবাক করা সংগ্রহ

valo sanbadহঠাৎ যদি কাউকে প্রশ্ন করেই বসেন, শখের তোলা কত? নিঃসন্দেহে উত্তর আসবে ৮০ টাকা। তবে কারো কাছে শখ অমূল্য রতন। এমনই একজন শখের মানুষ এস এ এইচ ওয়ালিউল্লাহ। তার শখ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও ডাকটিকেট সংগ্রহ করা। শখের বসে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একটু একটু করে মুদ্রা ও ডাকটিকিটের এক দারুণ সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন। এখন পর্যন্ত মোট ১৩৩টি দেশের মুদ্রা রয়েছে তার সংগ্রহশালায়। এছাড়া ৫৫টি দেশের প্রায় ১৫শ’ ডাকটিকেট জমা করেছেন। বর্তমানে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্ট্যাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

শুরুর গল্প: ওয়ালির এই শখের শুরুর গল্পটা একটু ভিন্ন।

একবার ফুফাতো বোনের থেকে ৬টি অস্ট্রেলিয়ান মুদ্রা পেয়েছিলেন তার মেজো ভাই। দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় বাবার কাছ থেকে খেলনা হেলিকপ্টার উপহার পান ওয়ালি। কিন্তু তার মোজো ভাই সেটা নষ্ট করে ফেলে। বিনিময়ে ভাইয়ের থেকে সেই ৬টি অস্ট্রেলিয়ান মুদ্রা পান। অষ্টম শ্রেণির শুরুতে খালার বাড়ি থেকে পেয়েছিলেন বৃটিশ ভারতের কিছু রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রা। তখন থেকেই নানা দেশের মুদ্রায় অঙ্কিত নানারকম ছবি দেখে ভালোলাগা শুরু। এই ভালোলাগা থেকেই ওয়ালির শখের পথে যাত্রা। প্রথমদিকে মুদ্রা দিয়েই তার সংগ্রহ শুরু হলেও পরবর্তীতে কাগজী নোটের সংগ্রহ শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় সংগ্রাহক জগতের পুরধা রবিউল ইসলামের সঙ্গে। যা পরবর্তীতে তার মুদ্রা সংগ্রহে সূচনা করে নতুন অধ্যায়।

ওয়ালি জানান, মুদ্রা সংগ্রহের আগে থেকেই বিদেশী মুদ্রার প্রতি আমার এক রকমের ঝোঁক ছিল। বৃটিশ ভারতের মুদ্রাগুলো হাতে নিলেই অন্যরকম একটা শিহরণ অনুভব করতাম। মনে হত দেড়শ বছরের জলজ্যান্ত ইতিহাস আমার হাতের মুঠোয়! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন চিনতে শিখলাম সংগ্রহ জগতের নানান অলিগলি; তখন নিজ শেকড় সম্পর্কে জানতেই, শুরু করি আরো প্রাচীনের খোঁজ। অচেনা এই পথে নিজের শেকড় খুঁজতে খুঁজতে ঢুকে পড়েছি এক বিশাল ইতিহাসের স্রোতে। যেখানে জিজ্ঞাসা, আবিষ্কার আর অনুমানের এক অসামান্য মিলন উপভোগ করছি।

ওয়ালির সংগ্রহে যা আছে: ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রকাশিত সকল ধরণের কাগজী নোট ও মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, এবং ইউরোপ আমেরিকা সহ মোট ১৩৩টি দেশের প্রায় দেড় সহস্রাধিক দেশি-বিদেশি মুদ্রা, কাগজী নোট এবং স্মারক নোট। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ১১৯ বছর আগের কয়েক ডজন কয়েন, ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরনো গান্ধার জনপদের মুদ্রা, ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা, মগধ জনপদ এবং মৌর্য সম্রাজ্যের মুদ্রা স্থান পেয়েছে তার সংগ্রহশালায়। এছাড়াও রয়েছে কিদারা রাজ্যের রাজা বিনয়াদিত্যের সোনার মোহরসহ ইন্দো-গ্রীক, পাঞ্চাল, শুঙ্গ, সাতবাহন, কুষাণ, পশ্চিম ক্ষত্রপা, গুপ্ত, নাগ, হরিকেল এবং মৈত্রক রাজবংশ ও  ভারতীয় উপমহাদেশের বেশ কিছু প্রাচীন রাজবংশের মুদ্রাসহ চৌহান, চালুক্য, গাধিয়া, প্রতিহার, মাদুরা, কাংরা প্রভৃতি রাজবংশেরও বেশকিছু মুদ্রা। রয়েছে ইতিহাসখ্যাত বীর মহীশুরের টিপু সুলতান, সম্রাট আকবর, শাহজাহান, আওরঙ্গজেবসহ ৬ জন মুঘল সম্রাটের সময় প্রচলিত মুদ্রা ও মুহাম্মদ বিন তুগলক, আলাউদ্দিন খিলজিসহ কয়েকজন দিল্লি সুলতানের মুদ্রাও। এছাড়াও পর্তুগীজ ইন্ডিয়া, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, বৃটিশ ভারতীয় বিভিন্ন সালের বেশ কিছু মুদ্রা; ট্রাভানকোর, বারোদা, মেওয়ার, হায়দ্রাবাদ, টঙ্ক, কুচ, শিবগঙ্গা, প্রতাপগড়সহ সমসাময়িক কয়েকটি প্রিন্সলি স্টেটের মুদ্রা জমা করেছেন তার সংগ্রহশালায়। মুদ্রার পাশাপাশি সংগ্রহ করেন ডাকটিকেটও। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫টি দেশের ১৫শ’ ডাকটিকেট সংগ্রহ করেছেন। সুইজারল্যান্ড প্রবাসী বরকত আল রহমান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে সংগ্রাহক হিসেবে পরিচয় ঘটে ওয়ালির। তিনি ওয়ালিকে ৪৫টি দেশের ১ হাজার ডাকটিকেট উপহার হিসেবে দিয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যে ৬শ’ এর মত ডাকটিকেট সংগ্রহ করে দেশে পাঠাবেন বলে ওয়ালিকে আশ্বস্থ করেছেন।

যেভাবে সংগ্রহ করেন: কখনও টাকা জমিয়ে আবার কখনও অন্যদের সঙ্গে বিনিময়ের মাধ্যমেও মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন ওয়ালি। ভারত, নেপাল, ভূটান, অস্ট্রেলিয়ান ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশের বন্ধুদের সঙ্গে মুদ্রা বিনিময় করেছেন। তিনি জানান, অবচেতন ভাবেই সংগ্রহের রাজ্যে পদার্পণ। এই মুদ্রার পিছনে ছুটতে ছুটতে আলাদা একটা জগতের দেখা পাই। ঢাকা ও কলকাতার নিলাম ডাক, তাঁতি বাজারের স্বর্ণের দোকান। এসব জায়গা থেকে অনেক মুদ্রা সংগ্রহ করেছি। তার বাবাও হজ্জ্ব করতে গিয়ে সৌদি মুদ্রা এনে দিয়েছেন। পরিচিত ও আত্মীয় স্বজন অনেকের কাছ থেকেই উপহার হিসেবে মুদ্রা পেয়েছেন। এখন তার জন্মদিনে কাছের মানুষরা অন্য কিছু নয় বরং মুদ্রা উপহার দিতেই বেশি পছন্দ করেন।

পরিকল্পনা: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি জানান, নিজ জেলা মাগুরাতে একটা সংগ্রহশালা করার ইচ্ছা আছে। যেটা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মুদ্রাগুলো দেখে আমাদের নতুন প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে। অনেকেই এই শিক্ষামূলক শখের প্রতি আকর্ষিত ও অনুপ্রাণিত হবে। এছাড়াও নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় করে প্রদর্শনীর ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button