হিরো অফ দি ডে

শখের মাল্টা বাগানেই ভবিষ্যৎ দেখছেন মাহবুবুল

ভালো সংবাদ
মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজার: একসময় মৌলভীবাজার জেলার নামকরা ফুটবলার ছিলেন। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মাঠ। তবে এখন সেসব কেবলই স্মৃতি মাহবুবুলের কাছে। শখের বসে বাড়ির পাশে ১২০ শতক জমিতে শুরু করা বাগানেই সময় কাটছে তার। এই শখের মাল্টা বাগানে এখন নিজের ভবিষ্যত দেখছেন মাহবুবুল।  এ বাগানে রয়েছে ৬০টি মাল্টা গাছ। পাশাপাশি ১০ থেকে ১৫ জাতের ফল। ২০১৬ সালের মে মাসে কৃষি বিভাগের পরামর্শে মাল্টার চাষ শুরু করেন তিনি। এরপর করতে থাকেন গাছের যত্ন। নিজের তত্ত্বাবধানে কোনো শ্রমিক ছাড়াই শখের বাগানে পরিচর্যা করতে থাকেন। প্রথম বছরেই গাছে মাল্টা আসে। কিছু মাল্টা বিক্রি করেন, আবার কিছু আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। সম্প্রতি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের গয়গড় গ্রামে অবস্থিত মাহবুবুলের মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছ নিচের দিকে ঝুঁকে পড়েছে মাল্টার ভারে। ফল এখনো পরিপক্ক হয়নি। দু-একটি গাছের ফল কিছুটা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে।  সারি সারি করা গাছগুলো নিজেই পরিচর্যা করছেন মাহবুবুল। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আগে এই জমিতে ব্রিকফিল্ড ছিল। পরে সেটি সরিয়ে ফেলা হয়। তাই দীর্ঘদিন এ জমিতে কিছু না লাগালেও ১৬ সালের দিকে এরকম একটা বাগান করার পরিকল্পনায় করেন। এই বাগান করার আগেও তিনি বড়িতে বিভিন্ন শাকসবজির ছোট ছোট বাগান করতেন।

মাহবুবুল বলেন, বাগানটি আমি শখের বসেই করেছি। মৌলভীবাজার কৃষি বিভাগ আমাকে যথেষ্ট সহায়তা করছে। প্রথম বছর থেকেই আমার বাগানে মাল্টা ধরতে শুরু করে। গত বছর ১০ হাজার টাকার মালটা বিক্রি করেছি। প্রতি কেজি মাল্টা ২০০ টাকা করে বিক্রি করি। খুচরা কাস্টমার বেশি ছিল। পরিচিত অনেকেই আগে থেকে অর্ডার করে রাখতো।  লেবু জাতীয় ফসল মাল্টা। খুব নামি দামি এই ফলটি বাইরে থকে এসে দেশের চাহিদা মেটাতো। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে দেশেই হচ্ছে এই মাল্টা চাষ। দাম যেহেতু ভালো পাওয়া যায় তাই চাষিরাও ঝুঁকছেন এ মাল্টা চাষে।  পাহাড়-টিলা বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার মাটি রসালো ফল চাষের উপযোগী। বিশেষ করে লেবু, কমলা ও আনারসে পাশাপাশি এখন আবাদ হচ্ছে মাল্টার।  মাহবুবুল জানান, একসময় মৌলভীবাজার জেলার ভালো একজন ফুটবলার ছিলেন তিনি। খেলেছেন জেলার বাইরে গিয়েও। পরে একসময় খেলাধুলা বাদ দিয়ে শখ করেই বাড়ির পাশেই এই বাগানটি করেন।

তিনি বলেন, বাগানে এইবার ভালো ফল এসেছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি গাছ গ্রিনিং রোগে আক্রান্ত। নিয়মিত কীটনাশক দিচ্ছি যাতে তাড়াতাড়ি গাছটি আক্রান্ত থেকে সেরে উঠে। বাগানটি দেখতেও অনেকে আসেন। ভবিষ্যতে এই বাগান আরও বড় পরিসরে করার চিন্তা রয়েছে। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ পর্যন্ত ছোট-বড় মিলে ২৭৫টি মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে। বাগানে মোট জমির পরিমাণ ৮০ হেক্টর। গড় ফলন ৬ মেট্রিক টন। আর মোট ৪৮০ মেট্রিক টন উৎপাদন হওয়ার কথা বলছে কৃষি বিভাগ।

সবচেয়ে বেশি শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মাল্টা উৎপাদন হয়ে আসছে। এ উপজেলায় পনেরো হেক্টর জমিতে ৫৫টি মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে।  মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী রাইজিংবিডিকে জানান, এ জেলার মাটি যেহেতু কিছুটা এসিডিক সয়েল সেজন্য লেবুজাতীয় ফসলের জন্য উপযোগী। পাহাড়-টিলা বেষ্টিত জেলার মাটি মাল্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এছাড়া বারী মাল্টা-১ জাত এ অঞ্চলের মাটিতে ভালো ফলন হয়েছে। ছোট আকৃতির এ ফসল অত্যন্ত রসালো ও সুস্বাদু হিসেবে বেশ পরিচিত হয়ে উঠছে।

ভালো সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

এমন আরো সংবাদ

Back to top button