আম-লিচু নয়, লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী মামুনুর
পড়ালেখা শেষে চাকরির পেছনে না ছুটে আম-লিচুর বাগান করেন মামুনুর রশীদ। কাঙ্ক্ষিত লাভ না পেয়ে লেবু চাষ শুরু করেন। সারাবছরই লেবুর ভালো চাহিদা থাকায়, বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে বাড়তি চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়ায় লেবু চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন তিনি। তার এমন সাফল্য দেখে অনেকেই লেবু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বেপারিটোলা গ্রামের মামুনুর রশীদ সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ৫৫০টি থাই জাতের লেবুর চারা লাগান এবং ১ হাজার ১৫০টি দেশীয় জাতের লেবুর চারা লাগিয়েছেন। গত দুই বছর ধরে তার বাগানে লেবুর ফলন শুরু হওয়ায় বিক্রি শুরু করেন। এছাড়াও গাছের কলম তৈরি করে কলম বিক্রি শুরু করেছেন। মামুনুর জানান, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে লেখাপড়া শেষ করে বাড়িতে আসি। এরপরে চাকরির পেছনে না ছুটে ৭ বিঘা জমিতে গড়া পারিবারিক আম-লিচুর বাগানসহ চাষাবাদে ঝুঁকে পড়ি। কিন্তু আম-লিচুর বাগানে পরিশ্রম ও ব্যয়ের তুলনায় টাকা আসতো না। বছরে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় হতো। এজন্য বিকল্প চিন্তা শুরু করি। এরপর বাগানে ১০০টির মতো লেবু গাছ লাগাই। এরপরে ইউটিউবে বিভিন্ন ব্যক্তির লেবু চাষের সাফল্য দেখে লেবুর বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। তখন চিন্তা করি এমন কোনও লেবুর গাছ পাওয়া যায় যে গাছে সারাবছর লেবু ধরবে ও প্রতিদিন লেবু তুলে যেন ৩-৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পর যশোরের বেনাপোল থেকে সেই জাতের লেবুর খোঁজ পেলাম। সেখান থেকে চারা সংগ্রহ করলাম। তারপর পাঁচ বছর আগে ২০ বছর বয়সী আম-লিচুর গাছগুলো কেটে সেখানে লেবুর বাগান করি। তখন সবাই আমাকে পাগল বলে ভর্ৎসনা করছিলেন। পাঁচ বছর পর এখন আমার লেবুর বাগানে লেবুর ফলন এবং লাভ দেখে সবাই প্রশংসা করছেন। বর্তমানে আমার বাগান থেকে উৎপাদিত লেবু বিক্রি করে বছরে ৩-৪ লাখ টাকা আয় করছি।
পাশাপাশি তিনি গাছের কলম করেও বিক্রি শুরু করেছেন। ২৫ হাজার টাকার কলম চারা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে প্রতিটি লেবু পাইকারিতে ৩ টাকা ও কলম চারা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে লেবুর গাছের যে পরিমাণ চাহিদা তাতে করে এ বাগান থেকে প্রতিবছর ৩-৪ লাখ টাকার কলম চারা বিক্রি হবে।
বাগানে কর্মরত শ্রমিক জাহিদ ও চঞ্চল বলেন, আমরা সাধারণত পড়ালেখার পাশাপাশি যে অবসর সময় থাকে সে সময়টুকু মামুন ভাইয়ের লেবুর বাগানে কাজ করে থাকি। আমাদের মতো এখানে ১৫-২০ জন ছাত্র পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের একটা বাড়তি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে যেটা আমাদের অনেকটা সুবিধা হয়েছে। তার মতো স্থানীয়রা যদি এমন বাগান করতো তাহলে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিকছন চন্দ্র পাল বলেন, বিরামপুরে বর্তমানে লেবু চাষে ব্যাপক সফলতা দেখা যাচ্ছে। এখানে কৃষকরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লেবু চাষ করছেন। একইসঙ্গে লেবুর চারা তৈরি করে তা বিক্রি করছেন যা থেকেও ভালো আয় করছেন চাষিরা। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করে আসছি লেবু চাষ লাভজনক হওয়ায় বিরামপুরে এর ভালো প্রসার ঘটবে বলেও জানান তিনি।