কভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিস্কারক মুসলমান দম্পতি
নিউইয়র্ক বিশ্ব বিখ্যাত ওষুধ কোম্পানি ফাইজার এবং জার্মান ভিত্তিক বায়োএনটেক, ৯০% সফলতা নিয়ে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা করেছেন। কভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ফলে থমকে যাওয়া পৃথিবী আবার সচল হবে, স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ফিরে আসবে বলে দাবি করেছেন জার্মান ভিত্তিক বায়োএনটেক সিইও ড. শাহীন।
কভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পুরো দায়িত্বে ছিলেন বায়োএনটেক কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা শাহীন-তুরেসী নামক তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান চিকিৎসক/ বিজ্ঞানী, এক মুসলমান দম্পতি। মাত্র কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বায়োএনটেক কোম্পানিটি ইউরোপে খুব একটা পরিচিত না হলেও করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠেছে। ড. উগার শাহীন এবং তার স্ত্রী ড: উজলেম তুরেসি মূলত ক্যান্সার সেল নিয়ে গবেষণার জন্য বায়োএনটেক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
৫৫ বছর বয়সী ড. উগার শাহীন তুর্কির ইস্কেডেরুন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৪ বছর বয়সে ইস্কেডেরুন শহর থেকে অভিবাসী হিসাবে পরিবারের সাথে জার্মানিতে বসতি স্থাপন করেন। বাবা ফোর্ড গাড়ী ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে চাকুরী করে কোন রকমে সংসার চালাতেন। ছোট সময় থেকেই ড: শাহীনের ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে ডাক্তার হবেন। নতুন অভিবাসী হিসাবে অনেক কষ্টে পিজিসিয়ান হলেন অতঃপর কর্মস্থান থেকেই ১৯৯৩ সালে প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মস্থলে পরিচয় হওয়া ড.উজলেম তুরেসির সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই দুজনে মিলে বায়োএনটেক নামক একটি গবেষণা কেন্দ্র খুলেছিলেন যেখানে মূলত ক্যান্সার সেল নিয়ে গবেষণা করা হতো। কবিড-১৯ নামক কোন ভাইরাসের ওষুধ আবিষ্কার করবেন এমন কোন পরিকল্পনা তাদের ছিলোনা। আসলে কবিড-১৯ নামে কোন ভাইরাসের অস্তিত্বও তখন ছিল না।
মাত্র দুই বৎসর আগে জার্মানির একটি সেমিনারে মানব দেহের কোষে অবস্থিত আরএনএ সেল সম্পর্কে গবেষণামূলক তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছিলেন ড. শাহীন। আরএনএ সেল সম্পর্কে মানুষের বিশদ জ্ঞান থাকলে ভবিষ্যৎ কোন মহামারীর হাত থেকে মানব সভ্যতাকে বাঁচানো সম্ভব বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। সেখানেই পরিচয় হয়েছিল আমেরিকান ফাইজার কোম্পানির সিইও মি. আলবার্ট ব্রউলার এর সাথে।
এবছরের শুরুতে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পরলে ফাইজার কোম্পানির সিইও মি. আলবার্ট ব্রউলার, বায়োএনটেক কোম্পানির সিইও ড. শাহীনের সাথে যোগাযোগ করেন এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কারের গবেষণা শুরু করেন।
ড. শাহীনের স্ত্রী ড. উজলেম তুরেসি জার্মানিতে জন্ম নেয়া একজন চিকিৎসক বাবার সন্তান, তার পরিবার তুর্কির ইস্তানবুল থেকে জার্মানিতে বসতি স্থাপন করেছিলেন। স্বামী স্ত্রী দুজনেই ডক্টরেট ডিগ্রিধারী তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক। তাদের প্রতিষ্ঠিত বায়োএনটেক কোম্পানির বাজার মূল্য বেড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালে এইচআইভি এইডস ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য বিল এন্ড মেলিন্ডা গেইটস ফাউন্ডেশন বায়োএনটেক কোম্পানিকে ৫৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন। কোম্পানিতে বর্তমানে ১৪০০ গবেষক কর্মরত রয়েছেন। বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে ড. শাহীন তাদের প্রতিষ্ঠিত ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্র বায়োএনটেক ইউরোপের সর্বোবৃহহতম ঔষুধ তৈরীর কোম্পনিতে রূপান্তর করাই তাদের স্বপ্ন বলে জানিয়েছেন।
এর আগে ২০১৯ সালে ড. শাহীন ইরানের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক মুস্তফা এওয়ার্ড জিতেছিলেন। “মুস্তফা এওয়ার্ড” বিশ্বব্যাপী মুসলমান গবেষকদের মাঝে সর্বোচ্চ সম্মানিত এওয়ার্ড বলে গণ্য করা হয়।