গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কভিড-১৯ থেকে দ্রুত সেরে ওঠার পর ডার্ক ওয়েবে (ইন্টারনেটের এমন জগৎ যেখানে নিজের পরিচয় ও তথ্য গোপন রেখে যেকোনো কিছু অনুসন্ধান করা যায়। অনেক সময় অবৈধ কাজ ও বাণিজ্যের জন্যও এটি ব্যবহার করা হয়) রেজেনেরন ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধ বিক্রি করা শুরু হয়, তাদের দাবি মতে এই ওষুধটিই তত্কালীন প্রেসিডেন্টের অলৌকিকভাবে সেরে ওঠার কারণ। যদিও এখন পর্যন্ত এটি জনপরিসরে বিক্রির অনুমোদন লাভ করেনি। এপ্রিলে বিশ্বব্যাপী আইসিইউগুলো যখন কভিড-১৯-এর রোগীতে ভর্তি হয়ে গিয়েছিল, তখন একজন বিক্রেতা ডার্ক ওয়েবে বিপুল পরিমাণে ভেন্টিলেটর বিক্রির ঘোষণা দেয়। যেখানে ক্রেতাদের ন্যূনতম ৩০০টি ভেন্টিলেটর কেনার কথা বলা হয়।
মহামারীর প্রাদুর্ভাব যতই বেড়েছে টয়লেট পেপার, বিমানের সিট এবং ভারমন্ট রিয়েল এস্টেটের বেচাকেনাও ততই বেড়েছে, যা ঘটেছে মূলত ডার্ক ওয়েবের অবৈধ বাজারে। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটকালে এখানে একদিকে কেউ কেউ যেমন লাভে আখের গোচাচ্ছে , তেমন অন্যদিকে আতঙ্কিত হয়ে মানুষের কেনাকাটাও চলছে। ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে।
বৈশ্বিকভাবে কভিড-১৯-এ মৃতের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে ডার্ক ওয়েব মার্কেটে হাজারো প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন আসতে শুরু করে। সাধারণ সময়ে এ প্লাটফর্মে মাদক, অস্ত্র, পর্নোগ্রাফি এবং চুরি করা বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি হতো। কিন্তু সে পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে কভিড।
ডার্ক সাইটের আরেকটি দিক হচ্ছে এটির ব্যবহার খুব বেশি জটিল না এবং এর জন্য অনেক জানাশোনারও প্রয়োজন পড়ে না। আবার এটা এমন না যে অনেক মানুষ ব্যবহার করেন। এখানকার বেশির ভাগ ব্যবসা মূলত অবৈধ এবং ব্যবহারকারী নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ছন্দনাম ব্যবহার করে কেনাবেচার কাজ করে। পাশাপাশি কভিড-১৯ অবৈধ বাণিজ্যের এ মার্কেটকে আকার দিয়েছে এবং এখানকার বাসিন্দাদের নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অথচ মহামরীর শুরুর দিকে বিক্রেতারা কভিড সংক্রান্ত বিভিন্ন পণ্যের সংকটে পড়েন। যেখানে মেডিকেল সরঞ্জাম এবং টেস্ট কিটও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গ্রীষ্মের শেষ দিকে এখানে চুরি করা ডিজিটাল পরিচয় বিক্রি শুরু হয় সরকারি কর্মসূচিতে প্রতারণা করার জন্য, এ কর্মসূচিগুলো ছিল মূলত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং বেকারদের সাহায্য করার নিমিত্তে। সর্ব সম্প্রতি ডার্ক ওয়েবের ব্যবসায়ীরা যারা সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষা করতে চান না, তাদের জন্য তথাকথিত ভ্যাকসিনও প্রস্তাব করেছে।
সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষকদের তদন্ত দল সিটিআই লিগের আসন্ন এক প্রতিবেদন বলছে, সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মূল্যের কভিড সম্পর্কিত পণ্য ডার্ক ওয়েবে বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি সাইটগুলোয় বিভিন্নভাবে কভিড পণ্যের ব্র্যান্ডিংও করা হচ্ছে।
এ বাজার কতটা আকর্ষণীয় তা জানা কার্যত অসম্ভব। তবে জাতিসংঘের ওষুধ ও অপরাধ সংক্রান্ত অফিস জুনে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে মাদক ব্যবসায়ীরা কভিড সম্পর্কিত পণ্যগুলো কেন্দ্রে নিয়ে আসবে। পাশাপাশি এও বলা হয় যে এখানে যথেষ্ট পরিমাণ মরিয়া ক্রেতা রয়েছেন, যারা বিক্রেতাদের অর্থ উপার্জনে সহায়তা করবেন।
সিটিআই লিগের শন ও’কনর বলেন, কভিড হচ্ছে ডার্ক ওয়েবে বিক্রির জন্য একটি বড় ধরনের ব্ল্যাক ফ্রাইডে। এটা ডার্ক ওয়েবের একটি বিপণন হাতিয়ার, যা এখানকার ব্যবসায়ীদের নগদ লাভের জন্য ইতিবাচক।
এপ্রিলে জাতিসংঘ কভিড পণ্য পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতারণার বিষয়ে আগাম ইঙ্গিত দেয়। যেভাবে বিজ্ঞানী ও রোগ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা রোগ নির্ণয় এবং টেস্টিংয়ের ধাপ থেকে চিকিৎসা ও প্রতিরোধের ধাপে উন্নীত হয়েছে, একইভাবে প্রতারকরাও নিজেদের ব্যবসাকে সেভাবে রূপান্তর ঘটিয়েছে। এমনকি এখান থেকে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তথ্যও ছড়াচ্ছে।
দ্য প্রিন্ট থেকে সংক্ষেপে অনূদিত