আপনি জানেন কি?হাইলাইটস

ফাইজারের ভ্যাকসিনের সফলতার অর্থ কী?

k‘এটা কাজ করছে!’—সম্প্রতি ফাইজারের বিকাশমান ভ্যাকসিন নিয়ে বিজ্ঞানীরা সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদের কথা জানিয়ে এমন একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। যেখানে তারা করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ইতিবাচক অন্তর্বর্তীকালীন ফলাফলের কথা ঘোষণা করেছেন। মানবদেহে পরীক্ষার সর্বশেষ ধাপের এটি প্রথম রিপোর্ট। ৯ নভেম্বর ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের দেয়া ঘোষণাটি ভ্যাকসিন যে কভিড-১৯ আটকাতে পারে তার পক্ষে প্রথম জোরালো প্রমাণ। পাশাপাশি বিকাশের পর্যায়ে থাকা অন্য ভ্যাকসিনগুলোর জন্যও ইতিবাচক পূর্বাভাস প্রদান করছে। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় প্রকাশিত তথ্যগুলো যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির উত্তর দেয় না তা হলো, ফাইজার এবং তার মতো অন্য ভ্যাকসিনগুলো সবচেয়ে গুরুতর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে কিনা কিংবা করোনাভাইরাস মাহামারীর বিস্তারকে প্রশমিত করতে পারে কিনা।

ভাইরোলজিস্ট ফ্লোরিয়ান ক্রামের, যিনি ট্রায়ালে ৪০ হাজারের অধিক অংশগ্রহণকারীর একজনও, তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত আমাদের ডাটা দেখতে হবে কিন্তু এখনো আমি আমার উৎসাহ হারাচ্ছি না। এটা দারুণ ব্যাপার। আমি আশা করব আমি প্লাসেবো গ্রুপে নেই।

জার্মান কোম্পানি বায়োনটেকের সহযোগিতায় বিকাশমান এ ভ্যাকসিনটি আণবিক নির্দেশাবলি দ্বারা গঠিত। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রাথমিক ধাপে প্রাণিদেহের ওপর ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দারুণ প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছিল। তবে ভ্যাকসিন আসলেই কাজ করে কিনা তা জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষের ওপর এটি প্রয়োগ করা।

বিবৃতিতে ফাইজার ও বায়োনটেকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৪৩ হাজার ৫৩৮ জনের মধ্যে তারা ৯৪ জনের ক্ষেত্রে কভিড-১৯ শনাক্ত করেছে। তবে তারা উল্লেখ করেনি তাদের মাঝে কতজন প্লাসেবো গ্রুপ এবং কতজন ভ্যাকসিন গ্রহণকারী দলের ছিল। তবে তারা বলেছেন, দুটি গ্রুপের মাঝে কেসের বিভক্তি বলছে, ভ্যাকসিনটি রোগ প্রতিরোধে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর, যা পরিমাপ করা হয় ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীরা দ্বিতীয় ভ্যাকসিন ডোজ পাওয়ার এক সপ্তাহ পর এবং প্রথমটি পাওয়ার তিন সপ্তাহ পর। কভিড-১৯-এর ১৬৪টি কেস শনাক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ট্রায়াল চলবে, ফলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার প্রাথমিক হিসাবনিকাশ বদলাতে পারে।

কার্ডিওলজিস্ট এরিক টোপোল বলেন, যদিও ট্রায়াল সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর এবং সব ডাটা বিশ্লেষণ শেষে ভ্যাকসিনটি এতটা কার্যকর নাও থাকতে পারে, অবশ্য তার পরও এর কার্যকারিতা হয়তো ভালোভাবেই ৫০ শতাংশের ওপরে থাকতে পারে। এটি হচ্ছে সেই পরিসীমা যা দেখাতে পারলে ভ্যাকসিনটি ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কর্তৃক জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পাবে। টোপোল বলেন, আমি মনে করি এটা অনন্যসাধারণ এক অর্জন। এমনকি অনেক বিবরণ আমাদের হাতে না থাকলেও কারণ প্রথম ট্রায়ালটি শুরুর আগে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে কোনো ধরনের নিশ্চয়তা ছিল না।

প্রশ্ন থাকছে

টোপোল ও অন্য বিজ্ঞানী এখানে যে বিষয়টির অভাব বোধ করছেন তা হলো এ  ভ্যাকসিন যে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে, তার বিস্তারিত বিবরণ। এটি কেবল কভিড-১৯-এর মৃদু সংক্রমণ প্রতিহত করতে পারে, নাকি এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাঝারি ও গুরুতর সংক্রমণও অন্তর্ভুক্ত আছে।

এফডিএর ভ্যাকসিন মূল্যায়ন কমিটির উপদেষ্টা ও ভ্যাকসিন বিজ্ঞানী পল অফফিট বলেন, আমি রোগের সেই বর্ণালি সম্পর্কে জানতে চাই যা ভ্যাকসিন রোধ করতে পারে। আপনি প্লাসেবো গ্রুপে অন্তত মুষ্টিমেয় কিছু গুরুতর অসুস্থতা দেখতে চাইবেন। কারণ সেটি আপনাকে প্রস্তাব করবে যে এ ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন সফল।

পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট নয় যে যারা কোনো উপসর্গ দেখায় না বা মৃদু উপসর্গ দেখায় তারা করোনাভাইরাসের বিস্তৃতিকে আটকাতে পারে কিনা? সংক্রমণের স্থানান্তর রুখতে পারে এমন ভ্যাকসিনও মহামারীর ইতি টানার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু ফাইজার বা ট্রায়ালের পরের দিকে থাকা ভ্যাকসিন সেটি করতে পারে কিনা তা জানা কঠিন। কারণ এখানে নিয়মিত অংশগ্রহণকারীদের মাঝে কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। অফফিট বলেন, আপনি ৪৫ হাজার মানুষ নিয়ে সেটি করতে পারেন না।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যে বিবরণটি স্পষ্ট না তা হলো ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মাঝে ভ্যাকসিনটি কেমন কাজ করে। যেমন ক্রামের বলেন, আমরা এখনো জানি না যাদের সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন প্রয়োজন সেই বয়স্ক গোষ্ঠীটির ওপর ভ্যাকসিন কতটা কার্যকারিতা দেখাতে সক্ষম। তাছাড়া আফ্রিকান আমেরিকানদের ওপর ফাইজারের ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর তাও নিশ্চিত না।  ট্রায়ালে যদি সেই সব গোষ্ঠী থেকে যথেষ্ট পরিমাণে অংশগ্রহণকারীকে যুক্ত করা হয় তবে ভ্যাকসিনকে সাধারণীকরণ করা সম্ভব হবে। ফাইজার ও বায়োনটেক অবশ্য বলেছে, তাদের ট্রায়ালে তারা ৪২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী রেখেছে জাতিগত বৈচিত্র্যকে বিবেচনায়।

ইমিউনিটির স্থায়িত্ব

একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্তরহীন প্রশ্ন হচ্ছে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কখন ট্রায়াল শুরু হয়েছে এবং প্রাথমিক পর্যায়ের ট্রায়ালে ইমিউন প্রতিক্রিয়া নিয়ে আগে প্রকাশিত ডাটার ওপর ভিত্তি করে অংশগ্রহণকারী অনেকের রক্তে এখনো উচ্চমাত্রার সুরক্ষিত অ্যান্টিবডি দেখা গেছে। এমোরি ইউনিভার্সিটির ইমিউনোলজিস্ট রাফি আহমেদ বলেন, আমার কাছে প্রধান প্রশ্নটি হচ্ছে, ছয় মাস কিংবা তিন মাস পর কী হতে যাচ্ছে।

ফাইজারের এ ফলাফল অন্য ভ্যাকসিন নির্মাতাদেরও অনুপ্রেরণা জোগাবে। যেখানে মডার্নার বিকাশমান ভ্যাকসিনও অন্তর্ভুক্ত আছে। এছাড়া অন্য যেসব ভ্যাকসিন শেষ ধাপের ট্রায়ালে আছে তারাও এখন আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে এগিয়ে যেতে পারবে। বিশেষ করে যারা ফাইজারের ব্যবহার করা কৌশল অনুসরণ করে কাজ করে তারাও এখন নিজেদের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ব্যাপারে আশাবাদী হতে পারবে। ক্রামের বলেন, এ মুহূর্তে আমাদের এমন একটি ভ্যাকসিন দরকার যা কাজ করে। এমনকি সেটি যদি কয়েক মাসের জন্য কাজ করে এবং সংক্রমণের বিস্তৃতি রোধ করতে না পারে তবুও।

নেচার জার্নাল

এমন আরো সংবাদ

Back to top button