এন্টারটেইনমেন্ট

মুভি রিভিউ: রেইড (২০১৮)

raid 2018বলিউডে ভালো চিত্রনাট্য দেখে ছবি করার সুনাম যে কজন অভিনেতার রয়েছে তাদের মধ্যে অজয় দেবগন অন্যতম। সামাজিক ইস্যু নিয়ে ছবিতে বেশি কাজ করেন অজয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অপহরণ, গঙ্গাজল, যুবা, সত্যাগ্রহ ছবিগুলোর কথা। এরকমই আরেকটি ছবি রেইড। বিষ্ময়কর, শ্বাসরুদ্ধকর, অবিশ্বাস্য দুটি রেইডের সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে ছবিটির গল্প।

১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই ইন্ডিয়া টুডেতে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আয়কর কর্মকর্তারা কংগ্রেসের লোকসভার সদস্য (এমএলএ) এবং ব্যবসায়ী সর্দার ইন্দর সিং এর কানপুরের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে অংশ নেন ৯০ জন অভিজ্ঞ আয়কর কর্মকর্তা। অভিযানের নেতৃত্ব দেন লখনৌ এর তৎকালীন আয়কর কমিশনার সারদা প্রসাদ পান্ডে। অভিযানে আয়কর কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন।

১৮ ঘণ্টারও বেশি সময়ব্যাপী চলা এই অভিযানে ৪৫ জন মানুষের কাজ ছিল শুধু টাকা গোনা! ৮০ এর দশকে টাকা গোনার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্র হয়তো ছিল না। তাই পুরো হিসেবটাই হাতে গুনে করতে হয়েছিল। ইন্দর সিং এর বাড়ি থেকে নগদ ১ কোটি ৬০ লাখ রুপি উদ্ধার করা হয়। যার কোন বৈধ হিসাব ছিল না। এর বাইরেও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও অন্যান্য অবৈধ সম্পদ উদ্ধার করেন আয়কর কর্মকর্তারা। অভিযানটি বেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়।

তবে অজয় দেবগন অভিনীত চলচ্চিত্রে শেষের দিকে দেখানো হয়েছে, যে নেতার বাড়িতে অভিযান চালানো হয় তার নির্দেশে হাজার হাজার মানুষ আয়কর কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালায় এবং এক পর্যায়ে অজয় দেবগনের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে এই অংশটি ৮০ এর দশকের আরেকটি অভিযানের ঘটনা থেকে নেয়া হয়েছে।

সেটি ছিল ১৯৮৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ওইদিন আয়কর কর্মকর্তারা দুজন শিল্পপতির বাড়িতে এবং কারখানায় অভিযান চালান। এদের একজন ছিলেন পেপার মিলের মালিক হরিশ ছাবড়া এবং আরেকজন ছিলেন অলঙ্কার ব্যবসায়ী চিত্তরঞ্জন স্বরুপ। ৮৮ জন আয়কর কর্মকর্তা সেই অভিযানে অংশ নেন। প্রায় ২ কোটি রুপি সমমানের অবৈধ সম্পদ জব্দ করা হয় সেই অভিযানে। যার মধ্যে নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কারসহ আরো সম্পদ ছিল। শুরুতে সব ঠিক থাকলেও হরিশ ছাবড়া তার লোকজন দিয়ে আয়কর কর্মকর্তাদের উপর নৃশংস হামলা চালান। যদিও অভিযানের সময় নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। কিন্তু হামলাকারীরা সংখ্যায় এত বেশি ছিল যে পুলিশের পক্ষে তৎক্ষনাৎ তা সামাল দেয়া অসম্ভব ছিল। সেটা রেইড ছবিটার শেষাংশ দেখলে কিছুটা আন্দাজ করা যায়।

অভিযানে অংশ নেয়া আয়কর কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে বিবস্ত্র করে পিটিয়ে জখম করা হয়। জখম এতই মারাত্মক ছিল যে কয়েকজন আয়কর কর্মকর্তা সারাজীবনের জন্য প্যারালাইজড হয়ে যান।
এই দুটি বাস্তব অভিযানের মিশেলে নির্মিত হয়েছে অজয় দেবগন অভিনীত রেইড চলচ্চিত্রটি। আয়কর কর্মকর্তার ভূমিকায় ছিলেন অজয় দেবগন এবং নেতার ভূমিকায় অভিনয় করেন দূর্দান্ত অভিনেতা সৌরভ শুক্লা। মূলত এই দুজনের ফাটাফাটি অভিনয়ের কারণেই চলচ্চিত্রটি দারুন উপভোগ্য হয়েছে।

টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এই থ্রিলার চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন রিতেশ শাহ। ‘সিটি লাইটস’, ‘এয়ারলিফট’, ‘মাদারি’, ‘পিংক’ এর মত ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। ‘পিংক’ ছবির কাহিনীও রিতেশ শাহ এর লেখা। ‘রেইড’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন রাজকুমার গুপ্ত। এর আগে তিনি ‘ঘনচক্কর’ ও ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ এর মত ছবি পরিচালনা করেছেন।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button