হাইলাইটস

গাজীপুরে চা চাষ ঘিরে বাড়ছে সম্ভাবনা

chaগাজীপুর: টিলা,উঁচু চালাজমি সমৃদ্ধ ভাওয়ালের গাজীপুরের পরিচিত সারাদেশ জুড়েই। কাঠালের রাজধানীখ্যাত এই এলাকায় ফলে না এমন উদ্ভিদের দেখা মেলা ভার হলেও দীর্ঘদিন ধরেই চাষ না হওয়া ফসলের তালিকায় ছিল “চা-চাষ”।
এবার সেই অসাধ্য কাজটি সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন লুৎফর রহমান নামের এক অধ্যাপক। গাজীপুরের কাপাসিয়ার নিজের পৈত্রিক বাড়ীর অব্যবহৃত ৩হেক্টর জমিতে তিনি চা-চাষ শুরু করেছেন। তার আশা, অসাধ্য এ কাজটির মাধ্যমে তিনি গাজীপুরে চা-চাষ করে সম্ভাবনা তৈরী করেছেন।
বাড়ী গাজীপুরের কাপাসিয়া হলেও লুৎফর রহমানের বেড়ে উঠা ছিল সিলেটে। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের আইবিএ (৪র্থব্যাচ) থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী লুৎফর রহমান জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন (১৯৭৩-২০০৮) সাল পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি(আইইউবিএটি) এর রেজিষ্টার পদে দায়িত্বপালন করছেন।
পেশার তাগিদে চায়ের সাথে তার দীর্ঘদিনের চেনাজানার সূত্র ধরেই চা-চাষের পরিকল্পনা তৈরী করেন এই অধ্যাপক। আর বেছে নেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার চিনাডুলি গ্রামের পৈত্রিক সম্পত্তির পরিত্যাক্ত জায়গাগুলো।
তার মতে, হাজারো উদ্ভিদের মধ্যে একমাত্র চা-গাছগুলোই ব্যতিক্রম। কেননা তার বৈশিষ্টই হচ্ছে সে আপনাকে কিছু দিবেই, অন্তত চা গাছ কারো সাথে কোন ধরনের প্রতারণা করে না। গাজীপুর যেহেতু বন্যামুক্ত এলাকা ,উঁচু চালাজমি সমৃদ্ধ সেজন্যই বাড়ীর আশপাশের প্রায় ৩ হেক্টর জমি নির্ধারিত করে তিনি বন জঙ্গল পরিস্কার করে ২০১৯ সালে সিলেট থেকে ১০হাজার চারা এনে রোপন করেন। অল্পদিনেই তার রোপিত এই গাছগুলো বেড়ে উঠে এর সম্ভাবনা তৈরী করায় চলতি বছর বাড়ীর পাশের শীতলক্ষ্যার চরে আরো বেশ কিছু জমিতে তিনি চা- গাছ রোপন করেন। তার আশা কয়েকবছরেই তিনি এই বাগান থেকে উৎপাদনে যেতে পারবেন।
তিনি জানান, আগে আমাদের দেশে সিটিসি(অর্থোডক্স) জাতীয় চা-চাষ হতো। দিন দিন এ জাতীয় চা-চাষ কমে গেছে। বর্তমানে এ্ জাতীয় চা শুধু প্রতিবেশী ভারতের দার্জিলিংয়ে উৎপাদিত হয়। অর্থোডক্স অর্থাৎ প্রাচীন চা, তিনি এই গাজীপুর থেকেই উৎপাদন করতে চান। সে লক্ষ্যেই তার পথচলা। বর্তমানে সারাদেশেই চা-চাষ সম্প্রসারন হচ্ছে। গাজীপুরের পাশেই ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় চা-চাষ হচ্ছে, সে হিসেবে গাজীপুরেও চা-চাষেও সম্ভাবনা রয়েছে। তার মতে, যেখানে পানি জমে না থাকে, যে মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বেশী,সেচের ব্যবস্থা রয়েছে যেখানেই মূলত চা-চাষ হতে পারে। এমনকি সমতল ভূমিতেও। বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ন এই অর্থকরী ফসলের সম্প্রসারনে আরো কার্যকর ভূমিকা নেয়ার দাবী এই অধ্যাপকের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা গবেষনা ইন্সস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী জানান,চা দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হওয়ায় এ চাষ সম্প্রসারনে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের অনেক এলাকার সমতল ভূমির পাশাপাশি গাজীপুরের পাশেই ময়মনসিংহেও চা-চাষ হচ্ছে। তবে এখনো গাজীপুরের সম্ভাব্যতা ঝাচাই করা হয়নি। হয়তো পরীক্ষা করলে বলা যেতে পারে।
তিনি আরো জানান,শুধু চা চাষ করলেই হবে না,এর গুরুত্বপূর্ন দিক হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত করা। সে বিষয়টিতেও নজর দিতে হবে।

সম্পাদনা
ফয়সাল আহমেদ

এমন আরো সংবাদ

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker