জাদুবাস্তবতার বঙ্গবন্ধু টানেল
কর্ণফুলী নদীর ওপর যখন পিলার সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তখন সে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তৎকালীন মেয়র প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি দাবি তুলেছিলেন কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের। উন্নত বিশ্বের টানেলের বাস্তবতা যা আমাদের কাছে কেবলই স্বপ্নের, যেন শুধুই ছবি মাত্র। সে কারণে তখন মহিউদ্দিন চৌধুরী সেই দাবি অনেকটা অলীক, অবাস্তব বলে মনে হয়েছিল অনেকের কাছে। কর্ণফুলী নদীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান চাক্তাইখালের উজানে পিলার সেতু নির্মিত হলে নদী ভরাট হওয়ার আশঙ্কা থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরী পিলার সেতুর পরিবর্তে ঝুলন্ত সেতু বা টানেলের দাবি তুলেছিলেন।
মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে সেদিনের সে অলীক স্বপ্ন যা আজ নিখাদ বাস্তবতা। স্বপ্নময় এই প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। করোনাকালে কাজের গতি সামান্য থমকে গেলেও এখন পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
চীনের সাংহাই সিটির আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলকে সামনে রেখে চীনা সহযোগিতায় টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। টানেলটির নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। টানেলের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে চিরচেনা চট্টগ্রাম, পাবে এক নতুন রূপ। নদীর ওপারে গড়ে উঠবে আরেক চট্টগ্রাম।
৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ টানেলটি পতেঙ্গার নেভাল অ্যাকাডেমি পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে কাফকো ও সিইউএফএল পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে কর্ণফুলী নদীর ওপারে গিয়ে উঠবে। অর্ধেকেরও বেশি কাজ হয়ে যাওয়ায় ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এই টানেল। দেশের যে কয়টি মেগাপ্রকল্পের কাজ চলমান তার মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ। টানেলের দুটি টিউবের মধ্যে একটির কাজ শেষ, যেটি পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা অংশে গিয়ে উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে নভেম্বরের শেষে বা ডিসেম্বরের শুরুতে দ্বিতীয় টিউবের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালে।
টানেলটি যুক্ত হবে এশিয়ান হাইওয়ে, সিটি আউটার রিং রোড, আনোয়ারা ইকোনমিক জোন, পারকি সৈকত, বাশঁখালী-পেকুয়া হয়ে কক্সবাজার এবং মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর সড়কের সঙ্গে। টানেলটি নির্মাণ করছে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। প্রকল্পটির প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮৮০.৪০ কোটি টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ৩৯৬৭.২১ কোটি টাকা এবং চীন সরকারের অর্থ সহায়তা ৫৯১৩.১৯ কোটি টাকা।