মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের দ্বারপ্রান্তে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে গত ৪টি বছর ধরে আছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এই সময়ে তিনি জড়িয়েছেন নতুন নতুন বিতর্কে। বিতর্ক ছাড়া ছিলেন না বলতে গেলে কোনো সময়েই। তবে তার দায়িত্ব পালনকালে রয়েছে আরো বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দিক। সেসব নিয়েই সামগ্রিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মান গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।
প্রেসিডেন্সির প্রথমদিনই নারীদের প্রতিবাদ
ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি। আর সেদিনই মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনেক নারী ট্রাম্পের যৌন কেলেঙ্কারির ইস্যুতে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে অন্তত ২৬ নারী যৌন নিগ্রহের অভিযোগ এনেছেন।
পর্ন তারকার সঙ্গে ‘সমঝোতা’নিয়ে তোলপাড়
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোয়েন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে এক লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে সমঝোতা করেছিলেন। সেই তারকার সঙ্গে ট্রাম্পের “পরকীয়া” সম্পর্ক ছিল বলে দাবি পত্রিকাটির।
গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবারের সদস্যরা
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ট্রাম্প কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাতা জারেড কুশনার, তারা দু’জনেই প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা।
শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’
ট্রাম্প আশ্রয়প্রার্থীদের উপর অত্যন্ত কঠোর নীতি আরোপ করেন এবং দেশটির দক্ষিণের সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শুধু তাই নয় অনেক অভিবাসী পরিবারের শিশুদেরকে জোর করে বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেন তিনি। তার এই নীতির সমালোচনা করেছেন অনেকে।
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ সবচেয়ে আলোচিত ছিল তারমধ্যে অন্যতম রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক। অনেকেই মনে করেন ২০১৬ সালের নির্বাচনে জিততে ট্রাম্পকে সহায়তা করেছিল রাশিয়া। যদিও এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তবে গত চারবছর রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক বেশ দোদুল্যমান ছিল।
সবচেয়ে লম্বা ‘শাটডাউন’
২০১৯ অর্থবছরের বাজেটকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসে মতানৈক্যের কারণে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ ফেডারেল গভর্মেন্ট শাটডাউন দেখেছে হোয়াইট হাউজ। ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারী অবধি এই অচলাবস্থা বহাল ছিল।
প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়ায়
ক্ষমতায় থাকা কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পই প্রথম উত্তর কোরিয়ার মাটিতে পা রাখেন। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এই সফর।
জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি
২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস স্থানান্তর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেসময় ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ইসরায়েল খুশি হলেও ক্ষোভ প্রকাশ করে ফিলিস্তিন, আরব বিশ্বসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ।
তালেবানের সঙ্গে চুক্তি
দীর্ঘ চেষ্টার পর চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তান ইস্যুতে তালেবানের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে। এর মাধ্যমে তালেবানের সঙ্গে ১৯ বছর ধরে চলা যুদ্ধের আপাতত অবসান ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এই চুক্তি আফগানদের কতটা উপকারে আসবে তা নিয়ে সন্দিহান অনেক বিশেষজ্ঞ।
ইরান ইস্যুতে উল্টো নীতি
ওবামা প্রশাসন ইরানের সঙ্গে যে পরমাণু চুক্তি করেছিল, তা থেকে সরে আসে ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির ওপর আরো নানা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে বিদ্রুপ
ট্রাম্পের সর্বশেষ বিতর্ক ছিলো বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ নিয়ে। প্রথমে একে তিনি “চীনা ভাইরাস” বলে আখ্যা দিয়ে এর বিস্তৃতি ও ভয়াবহতা নিয়ে বিদ্রুপ করেন। তিনি সময়মত এই ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নিতেও নারাজ ছিলেন। ফলস্বরূপ, বিগত কয়েকমাস যাবৎ যুক্তরাষ্ট্র কোভিড-১৯ বিস্তার, সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যায় বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে।