শৈশবে তোতলা ছিলেন বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জো বাইডেন। তার পুরো নাম জোসেফ রবিনেট ‘জো’ বাইডেন। ১৯৪২ সালের ২০শে নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভেনিয়ার স্কার্নটন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত সিনিয়র সিনেটর। বারাক ওবামার সাথে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বাইডেন ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০২ এবং ২০০৮ সালে সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত প্রথম কোনো রোমান ক্যাথলিক বিশ্বাসী।
এবারের মার্কিন নির্বাচনে জিতে গেলে শপথ গ্রহণের সময় দেশটির সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হবেন জো বাইডেন। এখন তার বয়স ৭৭। রাজনীতির দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা তিনি কম করেননি। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে তিনি প্রথমবারের মতো মনোনয়ন চেয়েছিলেন। বাইডেনকে নিয়ে দ্য পলেটিকো একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
শৈশবে তোতলা ছিলেন বাইডেন
শৈশবে তোতলা ছিলেন জো বাইডেন। এক চেষ্টায় নিজের শেষ নাম বলতে পারতেন না বলে দুষ্টুমি করে বন্ধুরা তাঁকে ‘বাই-বাই’ বলেও ডাকত। তোতলামি বন্ধের চেষ্টা কম করেননি তিনি। কথা বলার আগে মনে মনে বাক্য সাজিয়ে নিতেন। মুখে নুড়িপাথর নিয়ে কথা বলার অনুশীলন করেছেন। ক্লাসে পাঠ্যবই থেকে জোরে জোরে পড়তে সমস্যা হতো বলে আগেই তা তিনি মুখস্থ করে আসতেন।
হোটেলের বিল পরিশোধের অর্থ ছিল না তার
কলেজে পড়ার সময় বসন্তের ছুটিতে বাহামায় গিয়েছিলেন জো বাইডেন। সেখানেই নেইলিয়া হান্টারের সঙ্গে দেখা। প্রথমে প্রণয়, পরে বিয়ে করেন তারা। দ্বিতীয় সাক্ষাতে যখন রেস্টুরেন্টে গেলেন, বিল পরিশোধের মতো অর্থ ছিল না বাইডেনের। সাহায্যের হাত বাড়ান নেইলিয়া, তবে টেবিলের নিচ দিয়ে। ২০ ডলারের একটি নোট এগিয়ে দিয়েছিলেন বাইডেনের দিকে।
বাইডেনের বাবা এক গাড়ি পরিবেশকের দোকানে কাজ করতেন। ছেলের বিয়েতে তিনি ১৯৬৭ মডেলের করভেট স্টিংরে গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। গাড়িটি এখনো ব্যবহার করেন জো।
সিনেটে নির্বাচিত হওয়ার পর স্ত্রীকে হারান বাইডেন
বাইডেন ১৯৬৯ সালে অ্যাটর্নি হন, ১৯৭০ সালে কান্ট্রি কাউন্সিলে নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মত সিনেটে নির্বাচিত হন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পঞ্চম কনিষ্ঠতম সিনেটর। কিন্তু সিনেটে নির্বাচিত হওয়ার সপ্তাহ কয়েক পরের ঘটনা। ক্রিসমাসের গাছ নিয়ে গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন তার স্ত্রী ও তিন সন্তান। ভুট্টাবাহী ট্রাক্টরের সঙ্গে সংঘর্ষে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই ১৩ বছর বয়সী কন্যা নাওমিসহ মারা যান নেইলিয়া। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল জো বাইডেনের দুই পুত্র বো ও হান্টারকে। হাসপাতালে বোকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল, সেখানেই সিনেট সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন জো বাইডেন।
ওই দুর্ঘটনার পর দেলাওয়ারের উইলমিংটনের বাড়িতে থেকেই অফিস করতে থাকেন বাইডেন। প্রতিদিন ৭৫ মিনিট ট্রেনযাত্রা করে ওয়াশিংটনে পৌঁছাতেন। এভাবে ৩০ বছরের বেশি সময় অফিস করেছেন। ট্রেনের কর্মীদের পরিবারের সদস্য মনে করতেন, নিজ বাড়িতে দাওয়াত করেও খাইয়েছেন।
১৯৭৭ সালে ইংরেজির শিক্ষক জিল ট্রেসি জ্যাকবসকে বিয়ে করেন জো বাইডেন। তাঁর ভাই ‘ব্লাইন্ড ডেট’-এর আয়োজন করেছিলেন। সেখানেই জিলের সঙ্গে বাইডেনের প্রথম দেখা।
ধূমপানে আসক্তি নেই
ধূমপান কিংবা অ্যালকোহলে আসক্তি নেই বাইডেনের। এ ধরনের বদঅভ্যাস মানুষের কাঁধে চেপে বসে বলে মনে করেন তিনি। ১৯৭০ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফুটবল, মোটরসাইকেল জাম্পিং, স্কিং—আমার কাঁধে এসবই চেপে বসেছে। তবে এগুলোর ওপর আমার কিছুটা নিয়ন্ত্রণও আছে।
ইরাক যুদ্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন বাইডেন
২০০২ সালে ইরাক যুদ্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন বাইডেন। ইরাকে সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাবে যখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ স্বাক্ষর করেন, বাইডেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য তারপর ওই সিদ্ধান্তকে বারবার ভুল বলেছেন তিনি।
দীর্ঘ বক্তৃতার অভ্যাস
দীর্ঘ বক্তৃতার জন্য বাইডেনের ‘খ্যাতি’ আছে। বক্তব্যের ডালপালা কতটা যে গজায়, তা বোধ হয় তিনি নিজেও জানেন না। সিনেটে তাঁর বক্তৃতা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে তৎকালীন সিনেটর বারাক ওবামা একবার এক টুকরো কাগজ এগিয়ে দিয়েছিলেন সহকারীর দিকে। সেখানে লেখা ছিল ‘আমাকে মেরে ফেলো’।