যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনগণের সরাসরি ভোটকে পপুলার ভোট বলে। নির্বাচনে কোনো প্রার্থী পপুলার ভোট বেশি পেলেই প্রেসিডেন্ট হন না। দরকার ইলেক্টোরাল কলেজে বেশি ভোট পাওয়া। দেশজুড়ে ৫০টি রাজ্যে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হতে অর্ধেক তথা অন্তত ২৭০টি ভোট পেতেই হবে। পপুলার ভোটে হেরেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার নজির রয়েছে। গত ২৩০ বছরের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৫৮টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩ জন প্রেসিডেন্ট পপুলার ভোট ও ইলেক্টোরাল কলেজ উভয় ক্ষেত্রে জয়ী হয়েছেন। পপুলার ভোটে হেরেও প্রেসিডেন্ট হয়েছেন পাঁচ জন। অর্থাৎ জনগণের ভোটে জয়ী হয়েও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি ওই নির্বাচনগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
জন কুইন্সি অ্যাডামস (১৮২৪)
এ ধরনের ঘটনা প্রথম ঘটেছিল ১৮২৪ সালে। নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন চারজন- অ্যান্ডু জ্যাকসন, জন কুইন্সি, উইলিয়াম ক্রফোর্ড ও হেনরি ক্লে। নির্বাচনে প্রথমে কুইন্সির চেয়ে পপুলার ভোট ও ইলেক্টোরাল ভোট বশি পান জ্যাকসন।
পপুলার ভোট ও ইলেক্টোরাল ভোট- উভয় ক্ষেত্রে পরাজিত হন জন কুইন্সি অ্যাডামস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংবিধানের মারপ্যাঁচে ও কংগ্রেসের সিদ্ধান্তে জন কুইন্সিই প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসের নিয়ন্ত্রণ পান।
রাদারফোর্ড বি হেইজ (১৮৭৬)
১৮২৪’র মতো ১৮৭৬ সালেও জনগণের ভোটে নয়, বরং কংগ্রেসের সিদ্ধান্তে প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। রিপাবলিকান রাদারফোর্ড বি হেইজের চেয়ে দুই লাখ ভোট বেশি পান ডেমোক্রেটিক স্যামুয়েল টিলডেন। ইলেক্টোরাল ভোট পেয়েছিলেন ১৮৪টি। হায়েসের চেয়ে ১৯টি বেশি।
কিন্তু তার পরও বিজয়ী নির্ধারণ নিয়ে উভয় দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করে কংগ্রেস। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সিদ্ধান্তেই প্রেসিডেন্ট হন রাদারফোর্ড।
বেঞ্জামিন হ্যারিসন (১৮৮৮)
ডেমোক্রেটিক প্রার্থী গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড রিপাবলিকান বেঞ্জামিন হ্যারিসনের চেয়ে ৯০ হাজার বেশি পপুলার ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেক্টোরাল ভোট পান ১৬৮টি। ২৩৩ ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট হন বেঞ্জামিন।
জর্জ ডব্লিউ বুশ (২০০০)
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোরের কাছে প্রায় পাঁচ লাখ ভোটে হেরে যান রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ। ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট দুই প্রার্থীরই সমান সমান। শেষ পর্যন্ত ২৭১ ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট হন বুশ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প (২০১৬)
ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিনটন পেয়েছিলেন মোট ভোটের ৪৮.২ শতাংশ। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভোট ছিল ৪৬.১ শতাংশ। ট্রাম্পের তুলনায় হিলারি ক্লিনটন ২৮ লাখ ৬৪ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন। এরপরও প্রেসিডেন্ট হন ট্রাম্প। কারণ হিলারি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট কম পেয়েছিলেন। তার ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ছিল ২২৭টি। আর ট্রাম্পের ছিল ৩০৪।