মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একেবারে দোরগোড়ায়। প্রায় ১০ কোটি লোক এরই মধ্যে ভোট দিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এই ভোটারেরা নির্বাচনের ফল শেষ পর্যন্ত মানবেন কিনা, তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার দাবি করছেন, নির্বাচনে জালিয়াতি হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকার ও চূড়ান্ত ফল সুপ্রিম কোর্ট থেকেই আসবে বলে দাবি করছেন তিনি।
এদিকে গত গ্রীষ্ম থেকেই ডাক বিভাগের সময়মতো চিঠি পৌঁছানোর হার কমে এসেছে। ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন বড় অনুদানদাতা হিসেবে পরিচিত পোস্টমাস্টার জেনারেল লুইস ডিজয় ডাকযোগে দেওয়া ভোটে কারচুপি করবেন বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই অবিশ্বাস ও শঙ্কার মাত্রা ঠিক কতটা, তা বুঝতে আমরা গত ৮ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ২ হাজার ১৫ জন মার্কিন ভোটারের মধ্যে জরিপ চালিয়েছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী এই মার্কিন ভোটারদের কাছে আমরা মার্কিন গণতন্ত্রকে পরাভূত করতে পারে এমন জালিয়াতি ও এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি কী, তা জানতে চেয়েছিলাম। আমরা বুঝতে চেষ্টা করেছি, কে কোন ঝুঁকিটি নিয়ে বেশি চিন্তিত। একই সঙ্গে আমরা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কে কোন দল সমর্থন করেন, তাও জানতে চাই।
‘ডাকযোগে ভোটের কারণে ভোট জালিয়াতি হবে’—এমন বক্তব্য কারা সমর্থন করেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। দেখা যায়, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৭ শতাংশই এই বক্তব্য সমর্থন করেন। এ ক্ষেত্রে রিপাবলিকানদের হার অনেক বেশি। বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন রিপাবলিকান অংশগ্রহণকারীদের ৭০ শতাংশ। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এ হার ৩০ শতাংশ।
জরিপের এই ফল বলছে, ট্রাম্পের বক্তব্য রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। অথচ এ সম্পর্কিত বিস্তৃত গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি খুবই বিরল ঘটনা। এমনকি বর্তমান মহামারি পরিস্থিতির আগেও প্রতিটি অঙ্গরাজ্য তাদের ভোটারদের একটি অংশকে ডাকযোগে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিত। কলোরাডো, হাওয়াই, ওরেগন, ইউটা ও ওয়াশিংটনে সব ধরনের নির্বাচনেই ডাকযোগে ভোটের সুযোগ রয়েছে।
‘নির্বাচনে পরাজিত হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বেচ্ছায় অফিস ছাড়বেন না’—এমন বক্তব্যে সমর্থন জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া ৪৯ শতাংশ ভোটার। এর মধ্যে ৭২ শতাংশ ডেমোক্র্যাটই এই বিবৃতিতে সমর্থন জানিয়েছেন। রিপাবলিকানদের মধ্যে এ হার ২২ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের ফল মেনে না নেওয়ার যে অবস্থান ট্রাম্প প্রকাশ করেছেন, তারই প্রকাশ ঘটেছে। এই সংখ্যা এত উচ্চ হওয়ায় তাই বিস্ময়ের কিছু নেই। যদিও মেয়াদ ফুরানোর পর কোনো প্রেসিডেন্টই অফিসে থেকে যাননি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছর এ ধরনের বিষয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগ এমনিতেই থাকে। তবে এবারের নির্বাচনে এ ধরনের উদ্বেগ প্রকাশকারীর সংখ্যা অনেক। মহামারির কারণে ভোট দেওয়ার পদ্ধতিতে আনা পরিবর্তন এর একটি কারণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডাক বিভাগের ব্যয় সংকোচন ও এর সেবার মানে হঠাৎ অবনমনের বিষয়টি। আর যখন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু আইনপ্রণেতা এ বিষয়ে নিজেদের বিতর্কিত অবস্থান তুলে ধরতে কুণ্ঠিত হন না, তখন এই উদ্বেগ ও শঙ্কা আকাশ ছোঁয়াটাই স্বাভাবিক। তাই নির্বাচনের ফল যা-ই হোক, তা এবার সংশয়ের ঊর্ধ্বে থাকবে না। আর এই ফল আসতে বিলম্ব হলে তো কথাই নেই।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজউকে প্রকাশিত মন্তব্য প্রতিবেদনটি লিখেছেন মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দুই অধ্যাপক জোসেফ ই উসিনস্কি ও ক্যাসি ক্লফস্টাড