হিরো অফ দি ডে

ড্রাগন ফলেই বাজিমাত জামাল মুন্সীর

ড্রাগন ফলেই বাজিমাত জামাল মুন্সীর
ড্রাগন ফলেই বাজিমাত জামাল মুন্সীর

ছোটবেলায় বাবা আয়নাল হক মুন্সীর সাথে মাঠে গিয়ে কৃষিকাজে অংশ নিতেন জামাল মুন্সী। ছেলেবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে একজন সফল কৃষক হবেন। কিন্তু বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। সেমতে জামাল মুন্সীকে গড়ে তোলেন তারা। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এখন তিনি একজন তরুণ প্রকৌশলী। কিন্তু জামাল মুন্সীর মন পড়ে থাকে মাঠে-ঘাটে। পড়ালেখার সময় ছুটিতে গ্রামের বাড়ীতে এলেই নেমে পড়তেন নানা কৃষিকাজ নিয়ে।

পড়ালেখা শেষ করার পর বিভিন্ন জায়গা থেকে চাকরির অফার পেলেও চাকরিতে তার আগ্রহ কম ছিল। নিজেই একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম এশিয়ান পাওয়ার টেক কোম্পানী লিমিটেড। ব্যবসার পাশাপাশি কৃষিকাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে গড়ে তোলেন একটি ড্রাগন ফলের বাগান। জামাল মুন্সীর বাড়ী ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়নের নিখুরহাটি গ্রামে। গত ১৭ মাস আগে বাড়ীর কাছেই তিনি গড়ে তোলেন একটি ড্রাগন ফলের বাগান।
৫৪ শতাংশ জমিতে লাগান ড্রাগন গাছের চারা। তার বাগানে এখন ড্রাগন ফলে ভরা। ফরিদপুর জেলার মধ্যে সবচে বড় ড্রাগন ফলের বাগানটি জামাল মুন্সীর। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই লোকজন আসছেন ড্রাগন ফল কিনতে। কেউ আসছেন ড্রাগন ফলের চারা কিনতে। আবার কেউ আসছেন কিভাবে বাগান করবেন তার পরার্মশ নিতে।

জামাল মুন্সী জানান, ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের প্রতি তার প্রচন্ড আগ্রহ ছিলো। মাটির প্রতি নিবির টানের কারণেই সে কৃষিকাজে কিছু একটা করার চিন্তা থেকেই ড্রাগন ফলের বাগানের দিকে নজর দেন। সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধী গুন সম্পন্ন থাকায় দেশে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণেই তিনি ড্রাগন ফলের চাষে নেমে পড়েন। ১৭ মাস আগে বাগান তৈরী করা, চারদিকে বেড়া দেয়া ও গাছের চারা লাগানো বাবদ তার ব্যায় হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। গত ৮ মাস আগে প্রথম দফায় ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন ৫০ কেজি। এ মাসে এখন পর্যন্ত ১২শ কেজি ফল বিক্রি করেছেন। গাছে এখনো কয়েক হাজার কেজি ফল রয়েছে। এ পর্যন্ত দুই লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত আরো দুই লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

জামাল মুন্সী আরও জানান, এখন পর্যন্ত ফল বিক্রি করে তিনি বেশ লাভের মুখ দেখেছেন। ড্রাগন ফলের বাগান করতে প্রথম দিকে খরচ হলেও এখন খরচ নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র বাগান পরিচর্যা করলেই প্রতি বছর ফল পাওয়া যায়। বাড়তি কোন খরচ নেই।

জামাল মুন্সীর ড্রাগন বাগানে রয়েছে সৌদি আরবের বেশকিছু খেজুরের চারা। আগামী বছর এ গাছ থেকে তিনি খেজুর বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। জামাল মুন্সী বলেন, তার ইচ্ছে রয়েছে বড় আকারের একটি রামবুটানের বাগান করার। সরকারের সহযোগীতা পেলে তিনি এ অঞ্চলের বেকার ও শিক্ষিত যুবকদের নিয়ে বড় আকারের ফল বাগানের প্রজেক্ট করবেন। যেখানে শতাধিক যুবক স্বাবলম্বী হতে পারে।

জামাল মুন্সী আক্ষেপ করে বলেন, একজন উচ্চ শিক্ষিত যুবক হয়েও তিনি আবেদন করে কোন ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ পাননি। যেখানেই গিয়েছেন সেখান থেকেই ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, সরকারের সহযোগীতা না পেলেও তিনি তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন। গ্রামের শিক্ষিত ও বেকার যুবকরা যাতে চাকুরীর আশায় না থেকে কৃষিকাজ করেই সংসার চালাতে পারেন সেটাই তার লক্ষ্য। সেমতেই তিনি কাজ করছেন। ইতোমধ্যে তার বাগান দেখে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ড্রাগন ফলের বাগান করার ইচ্ছে পোষন করেছেন। তাদের তিনি প্রশিক্ষণসহ কিভাবে বাগান করতে হয় তা হাতে কলমে শিক্ষাও দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন তার কাছ থেকে ড্রাগন ফলের চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।এছাড়াও তার বাগান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা চারশো থেকে পাঁচশ টাকা কেজি দরে ড্রাগন ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ড্রাগন ফলের বাগান করেই তিনি কৃষিতে বাজিমাত করতে চান।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button