হাতিরঝিলের আদলে দৃষ্টিনন্দন হবে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক
রাজধানীর একমাত্র দৃষ্টিনন্দন লেক হাতিরঝিলের আদলে এবার নগরীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী-বারিধারায় বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে ‘গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন’ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হাতিরঝিলের মতোই নান্দনিক রূপ পাবে এ লেক। প্রকল্পে আওতায় ব্রিজ, ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। গুলশান, বনানী, বারিধারা, বাড্ডা, শাহজাদপুর ও নিকেতন এলাকায় নয়টি দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ১০০ ফুট। পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির উপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত করবে। পিইসি সভার কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রাজউক সূত্র জানিয়েছে, মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল। প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এবারের সংশোধিত ডিপিপি’তে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে ২০২২ সাল পর্যন্ত। তবে নতুন পরিকল্পনায় ৮৬ দশমিক ৪২ একরের পরিবর্তে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে ৮০ দশমিক ১০ একর। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের থেকে দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে ভূমি অধিগ্রহণে। লেকের পাড়ের জমি কেউ যাতে নিজের বলে দাবি না করতে পারে সেই পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮৮৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। হাতিরঝিলের আদলেই গড়ে তোলা হবে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক। এ কারণেই সময় ও ব্যয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান দেবোত্তম সান্যাল বলেন, আমরা প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই শেষে পিইসি সভার জন্য প্রস্তুত করেছি। আগামী ৪ নভেম্বর প্রকল্পটির উপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাতিরঝিল প্রকল্পের কোল ঘেঁষে অবৈধ দখল থেকে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উদ্ধার, লেকের পানি ধারণ ক্ষমতা পুনরুদ্ধার এবং পানির গুণগত মান রক্ষাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে ঢাকা শহরের চারদিকের সৌন্দর্য বাড়ানো হবে। বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে লেকের পরিবেশের উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় হাতিরঝিললেকের ৯টি স্থানে হাতিরঝিলের মতোই নান্দনিক সেতু ও সেগুলোর ওপরে চারটি ওভারপাস তৈরি করা হবে। এরমধ্যে গুলশান ও বাড্ডার মধ্যে একটি এবং গুলশান-২ থেকে বারিধারা যেতে একটি সেতু নির্মাণ ছাড়াও নিকেতনে বিদ্যমান সেতুটি ভেঙে বড় সেতু তৈরি করা হবে। এছাড়া, শাহজাদপুরের ঝিলপাড়ে একটি, বনানী থেকে গুলশান-২ নম্বরে যেতে একটি, গুলশান-১ নম্বরের কাছে একটি, পুলিশ প্লাজা থেকে নিকেতন এবং বনানী থেকে গুলশান-২ নম্বরে যেতে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ২৪ হাজার ৬২২ দশমিক ১৬ মিটার রানিং মিটার ওয়াকওয়ে, ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ মিটার ওয়াকওয়ে এবং ১১ হাজার ৬৪ মিটার ড্রাইভওয়ে নির্মাণ করা হবে। অন্যদিকে দেড় হাজার রানিং মিটার তীর সংরক্ষণ, ৬৯ হাজার ৬১ বর্গমিটার টার্ফিং ও ২ হাজার ৪৮০ মিটার ড্রেনেজ লাইন নির্মাণসহ ৭৫০টি পিট ও তিন হাজার বৃক্ষরোপণ করা হবে। ২ দশমিক ১০ একর আয়তনের পার্ক, দুই হাজার মিটার ওয়াল, ২২ হাজার ১১৮ রানিং মিটার আরসিসি পাইপ স্থাপন ও পরামর্শক সেবা নিয়োগ দেওয়া হবে। লেকের চারপাশে সাধারণ মানুষের হাঁটা-চলার ব্যবস্থা থাকবে ২৪ হাজার ৬২২ দশমিক ১৬ রানিং মিটারজুড়ে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজন অনুসারে তিনটা ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও বাড্ডা এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনারও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। প্রকল্পের আওতায় নতুন কাজ যোগ হয়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ছে বলে জানায় রাজউক।
রাজউক সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১২ লাখ ৬০ হাজার ৮১৭ ঘন মিটার সøাজ অপসারণ, ৫ হাজার ৩৮৫ রানিং মিটার গ্রেড সেপারেটর নির্মাণ, ৫ হাজার ৬০৭ রানিং মিটার সড়ক, গৃহস্থলী স্যুয়ারের জন্য ১ হাজার ৫০০ মিটার আরসিসি পাইপ, ২ হাজার রানিং মিটার ইউ ড্রেন, বিদ্যুতায়ন, ২৬০টি ইন্টারসেকশন পিট, ২ দশমিক ১০ একর পার্ক, কড়াইল বস্তিবাসীদের পুনর্বাসন কাজ নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া ১১ হাজার৭২৭ রানিং মিটার তীর সংরক্ষণ, ২ হাজার, বৃষ্টির পানি অপসারণের জন্য দুই হাজার রানিং মিটার আরসিসি পাইপ, ২৭০ রানিং মিটার ফুটওভার ব্রিজ, লেকের পানি পরিষ্কার করা, সেরকারিভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বাইসাকেল লেন, এক্সসারসাইজ ইয়ার্ড, স্কেটিং জোন, অবজারভেশন টাওয়ার ও লেক সাইডে সিটিং ব্যবস্থা করা হবে।