আর মাত্র পাঁচ দিন পরেই দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। পৃথিবীর এই একটি মাত্র দেশের নির্বাচনই সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে। সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেন- কে হচ্ছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিশ্বজুড়ে প্রভাব-প্রতিপত্তির পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্টের আছে আকর্ষণীয়, বিলাসবহুল অনেক সুযোগ-সুবিধা। এর মধ্যে বিশটি আর্থিক সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হল। বিজনেস ইনসাইডার।
ছয় অঙ্কের সেলারি : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বার্ষিক সেলারি ছয় অঙ্কের। ২০০১ সালে কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের বেতন দুই লাখ থেকে বাড়িয়ে চার লাখ ডলার করে। পাশাপাশি বাড়তি খরচ হিসেবে আছে ৫০ হাজার ডলার বরাদ্দ। এছাড়া ভ্রমণ বাজেট এক লাখ ডলার ও প্রমোদ ব্যয় ১৯ হাজার ডলার।
এ অর্থ অবশ্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য নস্যি। ফোর্বসের হিসাব মতে, তিনি ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের মালিক। ২০১৬ সালে প্রচারণার সময় প্রতীকী ১ ডলার বেতন নেয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের মূল বেতনের ওপর কর কাটা হয়। বাকি সুযোগ-সুবিধা করমুক্ত।
সবচেয়ে বিখ্যাত বাড়িতে বসবাসের সুবিধা : মার্কিন প্রেসিডেন্টরা বিলাসবহুল হোয়াইট হাউসে বসবাসের সুযোগ পান। ১৭৯২ সাল থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টরা এতে বসবাস করে আসছেন। হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সে ছয়টি ফ্লোর ও ১৩২টি রুম রয়েছে।
এতে টেনিস কোর্ট, সুইমিংপুল, ফিটনেস সেন্টার ও বাগানের ভেতরে চলার পথও রয়েছে। হোয়াইট হাউস বা সাদা বাড়ি একক বাড়ি হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত।
বাড়ি সাজানোর জন্য ১ লাখ ডলার : বিখ্যাত সাদা বাড়ি তথা হোয়াউট হাউসে ওঠার পর নতুন করে বাসস্থান সাজানোর জন্য ১ লাখ ডলার পান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এটি দেয়া হয় প্রেসিডেন্ট যাতে একে পরিচিত বাড়ির মতো ভাবতে পারেন।
বারাক ওবামা এই ডেকোরেশন ভাতা নেননি। অন্যদিকে ট্রাম্প এই ডেকোরেশন বাবদ ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার খরচ করেছেন। তবে এটি কোনো খাত থেকে ব্যয় হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
হোয়াইট হাউসের তাজা ফল-সবজি : মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাইসের তাজা ফলমূল ও সবজি ভোগ করতে পারেন। ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মিশেল সবজি চাষ শুরু করেন। ট্রাম্প আসার পর মেলানিয়া সেটি অব্যাহত রেখেছেন।
রান্না করা খাবার : হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হলে রান্না করা খাবার-দাবারের সুবিধা পান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। খাবারের জন্য একজন নির্বাহী শেফ ও নাস্তার বেকারি আইটেমের জন্য নির্বাহী পেস্ট্রি শেফ রয়েছেন হোয়াইট হাউসে। ১৫ বছর ধরে ক্রিস্টেটা কমাফোর্ড প্রথম নারী নির্বাহী শেফ হিসেবে কাজ করছেন।
পাঁচক ও গৃহকর্মী : হোয়াইট হাউসজুড়ে প্রেসিডেন্টের সহায়তার জন্য নিয়োজিত আছে চাহিবা মাত্র পাঁচক ও গৃহকর্মী। রান্নার বুবর্চি, গৃহকর্মী, কাঠ মিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি ও ইলেকট্রনিক মিস্ত্রিসহ প্রয়োজনীয় সব কাজের ১০ জনের মতো শ্রমিক রয়েছে হোয়াইট হাউসে। এদের পেছনেই বছরে ৪০ লাখ ডলার ব্যয় হয়।
বল খেলার স্বতন্ত্র মাঠ ও অন্যান্য খেলাধুলা : প্রেসিডেন্টদের জন্য নিজে খেলার মাঠের পাশাপাশি বিলিয়ার্ড রুম ও অন্যান্য খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা এবং সুনির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। টেনিস কোর্ট, বাস্কেটবল কোর্টসহ সব ধরনের খেলা ও চিত্তবিনোদনের সুবিধা বিদ্যমান হোয়াইট হাউসে।
৫১ আসনবিশিষ্ট্য সিনেমা রুম : প্রেসিডেন্টরা হোয়াইট হাইসে বসে সিনেমা দেখার ও অতিথিদের দেখানোর ব্যবস্থাও রাখা আছে হোয়াইট হাউসে। প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট একটি রুমকে ৫১ আসনবিশিষ্ট্য থিয়েটারে রূপান্তরিত করেন।
মেরিল্যান্ডে অবকাশ যাপন কেন্দ্র : হোয়াইট হাউসের এলাহিকাণ্ডের পাশাপাশি কাউন্টি বা গ্রাম্য পরিবেশে অবকাশ যাপনের সুবিধা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য। মেরিল্যান্ডের ফেডেরিক কাউন্টিতে অবস্থিত এই অবকাশ যাপন কেন্দ্রের নাম ক্যাম্প ডেভিড।
এয়ারফোর্স-১ এর মতো অত্যাধুনিক বিমান : এয়ারফোর্স-১ হচ্ছে কেবল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনের জন্য নিয়োজিত বিশেষ বিমানব্যবস্থা। উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চ বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-২০০বি বিমান প্রেসিডেন্টের জন্য সবসময় রিজার্ভ থাকে। চার হাজার স্কয়ারফিটের বিমানটিতে মেডিক্যাল রুম ও প্রাইভেট রুম আছে। ১০০ জন যাত্রী ধারণে সক্ষম এই বিমানে ঘণ্টায় দুই লাখ ডলার খরচ হয়।
বিশেষ উড়োজাহাজ : এয়াসফোর্স-১ এর পাশাপাশি বিশেষ একটি উড়োজাহাজও রিজার্ভ থাকে প্রেসিডেন্টের জন্য। প্রেসিডেন্ট যেখানেই যান, এটি তার পেছনে অপেক্ষমাণ থাকে।
সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা : মার্কিন একজন প্রেসিডেন্ট সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় মোড়ানো থাকেন। এমনকি অবসরের সময়ও তার চতুর্পার্শ্বে থাকে সিক্রেট সার্ভিসের কড়া নিরাপত্তা। ২০১৭ সালে সিক্রেট সার্ভিসের জ্যন বাজেট ছিল ১৯০ কোটি ডলার।
বুলেট-বোমাপ্রুফ গাড়ি : প্রেসিডেন্টর জন্য বুলেট ও বোমাপ্রুফ গাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে। এটিকে বলা হয় দ্য বিস্ট। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিলাসবহুল এই গাড়িটিকে ঘিরে থাকে অনেক গাড়ির বহর।
৬০ হাজার স্কয়ারফিট গেস্ট হাউস : মার্কিন প্রেসিডেন্টে গেস্ট হলে তিনিও হবেন স্পেশাল। ৬০ হাজার স্কয়ারফিটের এক বিশাল বাড়ি অপেক্ষা করছে একজন অতিথির জন্য। ব্লেয়ার হাউস নামের গেস্ট হাউসটিতে রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশেষ মেহমানরা থাকেন। চারটি বাড়ির সমন্বয়ে তৈরি গেস্ট হাউসটিতে ১২০টি রুম ও ১৮ জন সার্বক্ষণিক কর্মী রয়েছেন।
সাবেক হলেও আছে অবকাশ সুবিধা : এক বা দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালন করুক মার্কিন প্রেসিডেন্টরা সাবেক হয়ে গেলেও তাদের ছুটি কাটানোর জন্য সুবিধা বরাদ্দ থাকে। ভ্রমণ, অবকাশ ও অন্যান্য কাজের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বার্ষিক দুই লাখ ডলার পান।
প্রিমিয়ার স্বাস্থ্য বীমা : দায়িত্ব পালন করার সময় সরকারি ডাক্তার ও সব ধরনের মেডিকেল সেবার পাশাপাশি সাবেক প্রেসিডেন্টরা প্রিমিয়ার স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা পান।
পেনশন সুবিধা : মার্কিন প্রেসিডেন্টরা বার্ষিক দুই লাখ পাঁচ হাজার ডলারের বেশি পেনশন পান। এটি সময়ের সঙ্গে কম বেশি করা হয়। এছাড়া অফিস এবং অন্যান্য বয়ের জন্য বরাদ্দ আছে।
দায়িত্ব হস্তান্তরের খরচ : মেয়াদ শেষ হলে অন্য প্রেসিডেন্টে কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য বাড়তি সুবিধা পান প্রেসিডেন্টরা। এটি অফিস ট্রানজিশন খরচ নামে পরিচিত। ওবামা ট্রাম্পের কাছে অফিস ট্রানজিশনের জন্য ৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার পেয়েছিলেন।
রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া : প্রেসিডেন্ট ও তাদের কিটাত্মীয়রা রাষ্ট্রীয় খরচে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া তথা কাফন-দাফন ও অনান্য আনুষঙ্গিক খরচ পেয়ে থাকেন।