মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ফ্রান্সের ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন?
ইসলাম ধর্মের অবমাননা করায় ফ্রান্স বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল মুসলিম দেশগুলো। তুমুল বিক্ষোভের পাশপাশি ফরাসি পণ্য বর্জন এবং ফরাসি কূটনীতিকদের তলব করে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগে একটি ক্রাইসিস সেন্টার খোলা হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের নানা দেশে ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এসব দেশের সঙ্গে ফ্রান্সের বাণিজ্যের নানা তথ্য উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে।
কৃষিপণ্য
বিশ্বের কৃষিপণ্যের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক ফ্রান্স। ফ্রান্সের মোট রপ্তানির তিন শতাংশ যায় মধ্যপ্রাচ্যে। ফরাসি কৃষিপণ্যের দশম বৃহৎ আমদানিকারক দেশ আলজেরিয়া। আর মহানবী (সা.)-এর কার্টুন প্রকাশের নিন্দা জানানো মরক্কো হলো ১৭তম বৃহৎ আমদানিকারক।
সুপারমার্কেট
সৌদি আরবের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফরাসি সুপারমার্কেট চেইন কারফুয়র বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান, লেবানন, বাহরাইন, মরক্কোসহ মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করে কারফুয়র।
জ্বালানি
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও তুরস্কে মূলত পেট্রোকেমিক্যাল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রি করে ফরাসি এনার্জি জায়ান্ট ‘টোটাল’। সৌদি আরবসহ কয়েকটি পারস্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রে টোটালের বিনিয়োগ আছে।
ফ্যাশন ও প্রসাধন পণ্য
কুয়েত সিটির এক দোকান থেকে গত রোববার ফরাসি ল’রিয়েল ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ও স্কিনকেয়ার পণ্য সরিয়ে ফেলতে দেখেছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদক। ওই দোকানসহ প্রায় ৭০টি দোকানের মালিক সমিতি ফরাসি পণ্য বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সৌদি আরব, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যে ফরাসি প্রসাধন সামগ্রীর দোকান রয়েছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া কিংবা ইউরোপের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যে ফরাসি ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর বাজার ছোট।
প্রতিরক্ষা ও এয়ারস্পেস
বিশ্বের অন্যতম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ ফ্রান্স। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, কাতারসহ মুসলিম অধ্যুষিত কয়েকটি দেশে অস্ত্র, উড়োজাহাজ প্রযুক্তি ও গণপরিবহন সিস্টেমস বিক্রি করে ফরাসি প্রতিষ্ঠান থালেস।
গাড়ি
ফ্রান্সের গাড়ি নির্মাতা রেনোর অষ্টম বৃহৎ বাজার তুরস্ক। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে তুরস্কে ৪৯ হাজার ১৩১টি গাড়ি বিক্রি করেছে রেনো। এ ছাড়া তুরস্কে ফরাসি গাড়ি সিত্রোয়েন ও প্যুজোর বিক্রিও সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে।
ফ্রান্সে, মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদশন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁর ইসলাম বিদ্বেষী মন্তব্য ক্ষুব্ধ করে তুলেছে বিশ্বের মুসলমানদের। এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের করাচিসহ আরো বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করেছে দেশটির মানুষ। ফরাসি প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি পোড়ানো হয়েছে ম্যাক্রোঁর ছবি-সম্বলিত পোস্টার।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যে বক্তব্য দিয়েছে তা দেড়শো কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। প্রতিবাদ হিসেবে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।
ফ্রান্স বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে সিরিয়াতেও। প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেয় শত শত মানুষ। এদিন বিক্ষোভকারীরা ফরাসি প্রেসিডেন্টের ছবি পদদলিত করেন। ইরাক ও ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরেও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফ্রান্স ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ইসলাম ধর্ম এবং মহানবী (স.)-কে নিয়ে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো ঘটনা নয়।
ভারতেও ফ্রান্স বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। মহানবী (স.)-র ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশ এবং সন্ত্রাসের সঙ্গে ইসলামকে জড়িয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবও। তবে বিশ্বের অনেক দেশ ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দিলেও সৌদি সরকার পণ্য বয়কটের পক্ষে নয়। এ ছাড়া ইরানে ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়।
বিশ্বজুড়ে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ফ্রান্স তাদের নাগরিকদের মুসলিম অধ্যুষিত ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, ইরাক ও মৌরিতানিয়ায় বসবাস কিংবা ভ্রমণ করার ব্যাপারে সাবধান করে দিয়ে বাড়তি পূর্বসতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে।