প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে থমকে আছে পুরো পৃথিবী। অর্থনীতি বিপর্যস্ত। বাংলাদেশে লকডাউন তুলে নেওয়া হলেও মানুষের জীবনযাত্রা পুরোপুরি সচল হয়নি। এর সবচেয়ে বড় অভিঘাত এসেছে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের ওপর। কর্মহীন এমন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পাশে আছি ইনিশিয়েটিভ’। নারী-শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার বিরুদ্ধেও সজাগ রয়েছে সংগঠনটি। এসবের প্রতিবাদ ও মানুষকে সচেতন করতে তাদের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। কমার্শিয়াল আর্টিস্ট, যারা এই করোনাকালে কোনো কাজ পাচ্ছেন না, তাদের দিয়ে রিকশার পেছনে ধর্ষণবিরোধী নানা প্রতিবাদী চিত্র আঁকিয়েছে সংগঠনটি। তারা রিকশার পেছনে চিত্রের পাশাপাশি লিখেছে- ‘মানবো না আমরা আর- ধর্ষণ ও অত্যাচার’, ‘রাস্তাঘাটে দিলে গায়ে হাত, লাথি খাবি ধুমধাম’, ‘আমার পোশাক নয়, তোমার মানসিকতা ধর্ষণের কারণ,’ ‘পুরুষশাসিত সমাজ আর নয়, নারী-পুরুষ সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করো’। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুরুর দিকে ১৫ থেকে ২০ রিকশায় এই চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। সামনে ২০০ থেকে ৩০০ রিকশায় এ ছবি অঙ্কনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাত ধরে যাত্রা শুরু এ সংগঠনের। বর্তমানে তাদের সদস্য সংখ্যা ২৩। করোনার দুঃসময়ে ঢাকাসহ সারাদেশের নানা পেশার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা; কারও জন্য খাবার, কারও জন্য অর্থ সাহায্য নিয়ে। আবার কারও অবিক্রীত পণ্য কিনে নিয়ে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি করছেন।
সংগঠনটির সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে সমকালের কথা হয় ‘পাশে আছি ইনিশিয়েটিভ’-এর প্রধান ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে ২২ মার্চ আমরা কয়েকজন একত্রিত হলাম। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত হলো, ৫০-৬০ জন রিকশাওয়ালা, অটোচালক ও সিএনজিচালককে চার থেকে পাঁচ দিন চলার মতো খাবার দিয়ে সাহায্য করব। শুকনো খাবার প্যাকেট করে তাদের মধ্যে বিতরণ করলাম। ফেসবুকে আমাদের কাজের একটি পোস্ট দিলাম। ভালো সাড়াও পেয়েছি। অনেকেই আমাদের সাহায্যে এগিয়ে এলেন।
তিনি বলেন, সাহায্য করতে গিয়ে আমরা দেখেছি জাফরাবাদ ঋষিপাড়ার জুতার কারখানার শ্রমিক, সাভারের সাজিদপুরের গার্মেন্টস শ্রমিকদের কষ্ট। তাদের অধিকাংশের ঘরে কোনো খাবার ছিল না। জাতীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গেও কাজ করেছি। তাদের তালিকায় থাকা প্রায় ২০০ পরিবহন শ্রমিককে খাবার দিয়ে সাহায্য করেছি। ঢাকার হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, বছিলা, গ্রিন রোড, রায়েরবাজার, বাংলামটর, কল্যাণপুর, হাতিরপুল, খিলক্ষেত, মহাখালী, কমলাপুর, মালিবাগ, রামপুরার বনশ্রী, মেরুল বাড্ডা, গুলশান নিকুঞ্জ, সাভার, শ্যামপুরসহ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলার ১০ উপজেলায় আমরা কাজ করেছি।