করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কায় এখন থেকেই সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান তিনি। আজ রোববার সকালে সেনাবাহিনীর ১০টি ইউনিট-সংস্থাকে জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে সাভার সেনানিবাসে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব পরামর্শ দেন। আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আরেকবার হয়তো এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। কারণ ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আবার নতুন করে দেখা দিচ্ছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। যেটুকু নেহাৎ প্রয়োজন তার বেশি কোনো পয়সা খরচ করা এখন চলবে না। ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে শুধু বাংলাদেশ না বিশ্বব্যাপী সকলের জন্য একটা স্থবিরতা এসে গেছে। এ ভাইরাসে আমরা অনেক আপনজনকে হারিয়েছি। অনেক মানুষকে দেশে-বিদেশে প্রবাসে হারিয়েছি। এই করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের অর্থনীতি যেন স্থবির না হয়, আর মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, তার জন্য আমরা শুরু থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এ সময় সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজসহ নগদ অর্থ সহায়তার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চিন্তা করেছি, যেভাবে হোক মানুষের কাছে অর্থ পৌঁছাতে হবে, আর্থিক স্বচ্ছলতা দিতে হবে এবং অর্থনীতি সচল রাখতে হবে। আমার একটাই লক্ষ্য- যেন কোনো মানুষ কষ্টে না থাকে। আর কৃষিতে আমার নির্দেশই ছিল- আমাদের প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। যে যেখানে আছে যার যার সামর্থ্য আছে, সব উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। কোনোমতে খাদ্য সংকট যেন দেখা না দেয়। কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী একটা খাদ্য মন্দা দেখা দিচ্ছে। অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা ঠিক সঠিক সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছিলাম বলেই আজকে হয়তো সেই সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে না। কিন্তু আজকে এখনো করোনা ভাইরাসের প্রবাহ আছে। কারণ ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আবার নতুন করে দেখা দিচ্ছে। তাই আমাদের এখন থেকেই সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। সেইসঙ্গে আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, করোনা চিকিৎসার জন্য আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ২ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি এবং টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি। এত দ্রুত সময় এতো সংখ্যক লোক নিয়োগ দেয়া একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু আমরা এটা করেছি যেন তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে করোনা রোগীদের যেন চিকিৎসা দিতে পারে। সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
এ ব্যাপারে সশন্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এইটুকুই চাইবো, দেশ আমাদের এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। এবারও আমরা বাজেট দিয়েছি। ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট, যেটা দেয়া খুব কঠিন ছিল। তবু আমরা দিয়েছি। তারপরও বলেছি, অর্থ খরচের ব্যাপারে সবাইকে একটু সচেতন থাকতে হবে। কারণ করোনা ভাইরাস যদি আবার ব্যাপকভাবে দেখা দেয়, তাহলে আমাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। মানুষকে আবার আমাদের সহযোগিতা করতে হবে, চিকিৎসা করতে হবে, ঔষধ কিনতে হবে হয়ত আরও ডাক্তার নার্স আমাদের লাগবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। ঠিক যেটুকু আমাদের নেহাৎ প্রয়োজন তার বেশি কোনো পয়সা খরচা করা এখন চলবে না। ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখেই সে ব্যবস্থা নিতে হবে। যদিও আমরা বাজেট ঠিক রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ২০ বছর মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও আমরা দিয়েছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে সেই পরিকল্পনাও নিয়েছি। ২১০০ সালে এই বদ্বীপ যেন আরও উন্নত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ডেল্টা প্ল্যান সেটাও গ্রহণ করেছি। অর্থাৎ শুধু বর্তমান না আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তারাও যেন সুন্দর জীবন পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এসব পরিকল্পনা হাতে নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, এটাই আমার লক্ষ্য। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। যেখানে দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ ছিল আমরা তার ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। সেটাও আমরা ধরে রাখতে হবে। আর নদী ভাঙণে ক্ষতিগ্রস্থ যারা তাদের সবাইকে আমরা ঘরবাড়ি করে দিচ্ছি, করে দেব। বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা ভূমিহীন থাকবে না। আমরা সেই পদক্ষেপ নিয়েছি।