দেশ

পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যান স্থাপন, দৃশ্যমান প্রায় ৫ কিলোমিটার

 পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যান স্থাপন করার পর দৃশ্যমান হয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। ছবি : সংগৃহীত
পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যান স্থাপন করার পর দৃশ্যমান হয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। ছবি : সংগৃহীত

পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে মূল সেতু দৃশ্যমান হয়েছে চার হাজার ৮০০ মিটার বা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। স্প্যানটি আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয়। এর আগে আজ সকাল ৯টার দিকে স্প্যানটি খুঁটির বরাবর নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ চার মাস পর এই স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্পটি আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের জানান, গতকাল শনিবার দিনভর চেষ্টা করেও প্রবল স্রোতের কারণে স্প্যানটি বসানো যায়নি। এর আগে গত ১০ জুন ৩১ নম্বর স্প্যানটি বসানো হয়েছিল।

আজ সকাল ৭টা থেকেই স্প্যানটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়। স্প্যান স্থাপনের জন্য বহনকারী ক্রেনবাহী ভাসমান জাহাজ ‘তিয়ান ই’ নির্দিষ্ট স্থানে নোঙর করে। এরপর ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে খুঁটির ওপরে তুলে স্প্যানটি বসিয়ে দেওয়া হয়। আবদুল কাদের জানান, গতকাল ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজটি যথাযথ স্থানে স্রোতের কারণে আসতেই পারছিল না। গত ২৪ জুন বসানোর কথা ছিল ৩২তম স্প্যান। এরপর বন্যায় দীর্ঘ সময় ধরে পদ্মায় পানিপ্রবাহ বেশি এবং প্রবল স্রোতের কারণে স্প্যান বসানো যাচ্ছিল না। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পাঁচটি স্প্যান খুঁটির ওপর বসানোর লক্ষ্য ছিল। তবে মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত থাকায় একটি স্প্যানও বসানো সম্ভব হয়নি।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি দ্বিতল হবে, যার ওপর দিয়ে সড়কপথ ও নিচের অংশে থাকবে রেলপথ। সেতুর এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব প্রায় ১৫০ মিটার। একেকটি খুঁটি ৫০ হাজার টন ভার নিতে সক্ষম। নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের জানান, চলতি মাসের প্রথম দিকে সবকটি স্প্যান বসানো শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি ছয় মিটারের বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যায়। তীব্র স্রোতে ভাসমান ক্রেন নোঙর করতে অসুবিধা হয়। এতে শিডিউল অনুযায়ী স্প্যান বসানো যায়নি।

প্রকৌশলীরা আশা করছেন, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ সব স্প্যান বসানোর কাজ সম্পূর্ণ করা যাবে। এদিকে, নির্বিঘ্নে স্প্যান বসানোর জন্য ভাসমান ক্রেনের দুপাশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়, যাতে করে উজান-ভাটির কোনো পাশ থেকে কোনো জলযান চলাচল করতে না পারে।

এদিকে, সেতুর অন্য কাজও এগিয়ে চলছে। সংশোধিত সময় অনুযায়ী মূল সেতু সমাপ্তির শেষ তারিখ আগামী বছরের ৩০ জুন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ পর্যন্ত মূল সেতুর ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে মূল সেতুর ২৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে এক হাজার ২৮টি এবং দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে এক হাজার ৫৭৬টি স্ল্যাব বসানো হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপার-টি গার্ডারের মধ্যে ২১৬টি বসানো হয়েছে। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৫০ ভাগ। ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত এই প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৫০ ভাগ। নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button