‘৪০ আন্ডার ৪০’ তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ন্যান্সি হক
‘তাঁর পুরো পেশাজীবনে, ইচ্ছা–আকাঙ্ক্ষার জায়গা তৈরির পথ খুঁজে পেয়েছেন’। সিলিকন ভ্যালি বিজনেস জার্নাল–এ ন্যান্সি হক সম্পর্কে লেখার একেবারে প্রথম লাইনটা এমনই। এই লেখার উপলক্ষ বিশ্বপ্রযুক্তির রাজধানী হিসেবে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির প্রভাবশালী এই সাময়িকীর ৪০ বছরের নিচে ৪০ (ফোরটি আন্ডার ফোরটি) তালিকায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ন্যান্সি হকের স্থান পাওয়া। প্রযুক্তির ব্যবসায় খাতে এমন সেরা নির্বাহী, উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের তালিকা প্রতিবছরই প্রকাশ করে সিলিকন ভ্যালি বিজনেস জার্নাল। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে যাঁরা নির্বাহী পর্যায়ে কাজ করেন এবং ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবেন, তাঁদের নামই স্থান পায় এই তালিকা। বাংলাদেশি মা–বাবার সন্তান ন্যান্সি হকের জন্ম, বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে।
ন্যান্সি হক এখন থাকেন সান ফ্রান্সিসকোতে। ৬ অক্টোবর যখন কথা হয়, তখন সেখানে রাত। ‘কোভিডের কারণে বাড়ি থেকেই অফিস করছি এখনো। এখানে সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এভাবে চলছে। আমাদের কোম্পানি বাসায় অফিসের মতো আসবাব বা যন্ত্রপাতি বসানোর খরচও দেয়।’ বললেন ন্যান্সি হক। তিনি বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডোবিতে কাজ করেন। অ্যাডোবিতে তিনি ম্যানেজার অব স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অপারেশনস। ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, পিডিএফ, প্রিমিয়ারসহ পেশাদার কাজের সফটওয়্যার নির্মাতা অ্যাডোবির ডিজিটাল এক্সপেরিয়েন্সের (ডিএক্স) বৈশ্বিক ব্যবসা পরিচালনাই ন্যান্সির কাজ।
পেশাজীবনের শুরু থেকে ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না ন্যান্সি। শুরুটা প্রকৌশলী হিসেবে। পড়াশোনার দিকে তাকালেও তা বোঝা যায়। ইউনিভার্সটি অব ক্যালিফোর্নিয়া (ইউসি) স্যান ডিয়েগো থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক এবং স্যান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন ন্যান্সি। এরপর ইউসি বার্কলির হাস স্কুল অব বিজনেস থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) করেন তিনি। পেশার শুরু মটোরোলায়। ‘সেখানে আমি সামরিক কাজের জন্য রেডিও সিস্টেম তৈরি করতাম।’ প্রায় ৯ বছর কাজ করেছেন সেখান। এরপর ওপেন ইনভেস্টমেন্ট, সাইমেনটেক হয়ে অ্যাডোবিতে যোগ দিয়েছেন এক বছর তিন মাস ধরে। মাথায় পরার স্কার্ফ তৈরির একটি স্টার্টআপও ছিল ন্যান্সি হকের। ‘সুন্দর সুন্দর নকশায় তৈরি হতো স্কার্ফগুলো। ছয় মাসের মধ্যে ২০টি দেশের বাজার পেয়েছিলাম।’ বললেন ন্যান্সি।
রকৌশল থেকে ব্যবস্থাপনায় কেন? ন্যান্সির জবাব, ‘আমি ব্যবসার নেতৃত্বের পর্যায়ে যেতে চাই। অ্যাডোবি তো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। তাই আমি যে প্রকৌশল বিদ্যা থেকে খুব বেশি দূরে আছি তা নয়। প্রযুক্তিজগৎ এখনো পুরুষশাসিত। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারণী জায়গাগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ এখনো কম। আমার ইচ্ছা এ অবস্থার পরিবর্তন হোক।’
অ্যাডোবির পেশাদার পরিচয়ের পাশাপাশি ন্যান্সির আরেক পরিচয় হলো তিনি দ্য পারস্যুট নামের অলাভজনক একটি উদ্যোগের সহপ্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ক্ষেত্রে যেসব নারী পরিবর্তন এনেছেন (চেঞ্জমেকারস), তাঁদের একত্র করার উদ্যোগ এটি। তাঁদের কথা, নানা বিষয়ে মতামত, আলোচনা করা হয় এ উদ্যোগের মাধ্যমে। এ রকম নানা উদ্যোগের কারণে ন্যান্সি এর আগে পেয়েছেন আরও কিছু স্বীকৃতি ও পুরস্কার। এগুলোর মধ্যে আছে বার্কলি–হ্যাস লিডারশিপ স্কলার ২০১৮, জি২০ ইয়াং গ্লোবাল চেঞ্জার অ্যাম্বাসাডর ২০২০, লিডারশিপ ক্যালিফোর্নিয়া ২০২০।
ন্যান্সির মা শাহিদা হোসেন ও বাবা তোফাজ্জাল হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান ১৯৮১ সালে। এর বছর দুই পরে ১৯৮৩ সালের ৯ মে জন্ম ন্যান্সি হকের। একমাত্র ছোট ভাই বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলার প্রকৌশলী। বাংলাদেশে তাঁদের বাড়ি কুমিল্লায়। মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশে আসা হয়, জানালেন ন্যান্সি। বিয়েও করেছেন বাংলাদেশি এহসান হককে। তিনি ই–কমার্স ওয়েবসাইট আমাজনের প্রাইম ভিডিওর প্রোডাক্ট ম্যানেজার। ন্যান্সি–এহসানের দুই ছেলে আকিরা হক (১১) ও রেইদেন হক (৯)। এই দুজনের আগ্রহ স্কিয়িংয়ে। ন্যান্সির শখও তাই। তাই শীতকালের অনেকটা সময় তাঁদের কাটে পর্বতে।