চাহিদা অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারছে না বিআরটিএ
চাহিদামাফিক ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করতে না পারার অভিযোগ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বিরুদ্ধে বেশ আগে থেকেই ছিল। এবার এ অভিযোগ করেছেন খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় এ অভিযোগ তোলেন মন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, চাহিদা অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করতে বিআরটিএ ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ ড্রাইভিং লাইসেন্সের চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। বিআরটিএ কিছু সেবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করতে শুরু করেছে। তবে মানুষ এখনো সব ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ও লাইসেন্স প্রদান কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী।
বিআরটিএতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ সংকটের পেছনে রয়েছে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্টকার্ডের সংকট। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা বিপুলসংখ্যক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে এ কার্ড সংগ্রহ করেও আবেদনকারীদের চাপ সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিআরটিএর কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছিল, তখন পর্যন্ত ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের তিন লাখ আবেদনকারী অপেক্ষায় ছিলেন। আর কার্ডের জন্য আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন আরো দুই লাখ চালক। কভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘদিন বিআরটিএর কার্যক্রম বন্ধ ও সীমিত ছিল। এতে কার্ডের জন্য অপেক্ষারত ও আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা চালকের সংখ্যা বর্তমানে আট লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা।
জাল, অবৈধ ও ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠেকাতে ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবর ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু করে বিআরটিএ। শুরু থেকেই কাজটি করে আসছে দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি। এ কার্ড চালুর পর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সারা দেশে ১৮ লাখ ৯০ হাজার ৩৩২টি স্মার্টকার্ড বিতরণ করে প্রতিষ্ঠানটি।
স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফায় চুক্তিবদ্ধ হয় টাইগার আইটি ও বিআরটিএ। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে সারা দেশে ১৫ লাখ কার্ড বিতরণের দায়িত্ব পায় টাইগার আইটি। এজন্য কার্ডপ্রতি মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪৭২ টাকা ৬০ পয়সা। তবে চুক্তির আগেই বেশির ভাগ স্মার্টকার্ড শেষ হয়ে যায়। এর পর থেকেই শুরু হয় কার্ড সংকট।
এ সংকট মোকাবেলায় গত ফেব্রুয়ারিতে জরুরি ভিত্তিতে চার লাখ স্মার্টকার্ড কেনার উদ্যোগ নেয় বিআরটিএ। সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার উদ্দেশ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে যে পরিমাণ চাহিদা আছে, এই চার লাখ কার্ড দিয়ে তা পূরণ করা হবে। বিআরটিএ স্মার্টকার্ডগুলো কিনবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে। বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব কার্ড দিয়ে বিদ্যমান চাহিদা মিটিয়ে ফেলা হবে। অন্যদিকে ৪০ লাখ কার্ড কেনার জন্য একটি দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান আছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেটি সম্পন্ন হলে বিআরটিএতে আর কোনো কার্ডের সংকট থাকবে না।