বিদেশগামীদের জন্য প্রস্তুত ২১টি ল্যাব
গত ২৬ সেপ্টেম্বর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে করোনা পরীক্ষা করার কারণে ৩২ জন সৌদি প্রবাসীকে রেখেই চলে যায় সাউদিয়ার ফ্লাইট। যদিও পরে তাদের টিকিট রি-ইস্যু করে দেওয়া হয়। তবে ওই ৩২ যাত্রী তাদের ভোগান্তির জন্য দোষ দিয়েছেন সাউদিয়া এয়ার লাইন্সকেই। তারা বলেছেন, সাউদিয়ার কর্মীরাই তাদের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর পরীক্ষার জন্য তাদের অতিরিক্ত টাকাও গুনতে হয়েছে। বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার ভোগান্তি কমানোর বিষয়ে পরীক্ষাগার বাড়ানোর কথা ভাবছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ‘শুরুর দিকে কম হলেও এখন বিদেশযাত্রীদের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন প্রায় এক হাজারের মতো যাত্রীর নমুনা পরীক্ষা হয়। তবে কয়েকদিনের ভেতরে সে সংখ্যা আরও বাড়বে, আর সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রয়োজন অনুযায়ী করোনা পরীক্ষার ল্যাব বাড়ানো হবে। মেডিক্যাল কলেজগুলোকেও কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটাও ভাবছি আমরা।’
প্রসঙ্গত, যেসব দেশে যেতে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট লাগে সেক্ষেত্রে যাত্রীকে ফ্লাইটে যাওয়ার আগে নেগেটিভ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়। তবে কোনও কোনও দেশে যেতে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয় না। আবারও কোনও কোনও দেশে পৌঁছানোর পর যাত্রীর করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট লাগে। সিঙ্গাপুর যেতে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয় না। যাত্রীরা দেশটিতে পৌঁছানোর পর তাদের করোনা পরীক্ষা করা হয়। খরচ যাত্রীকেই বহন করতে হয়।
ফ্লাইটে যাওয়ার আগে করোনা নেগেটিভ পরীক্ষা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করার নিয়ম করেছে বেশির ভাগ দেশ। তবে সৌদি আরব ৪৮ ঘণ্টার বিধান করায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে এক সৌদি আরবের যাত্রীদের যে ভোগান্তি হচ্ছে, ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়লে তখনকার অবস্থার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তারা এ সংক্রান্ত বিষয়ে মিটিং করেছেন, এজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। তবে সবচেয়ে বড় কথা, বেসরকারি কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও প্রবাসী যেন করোনা পরীক্ষা না করান সেটা জানা দরকার। আর এজন্য প্রচারণা দরকার বলেও মনে করছেন তারা।
বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা আরটিপিসিআর (রিয়েলটাইম পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন) করা হলেও বর্তমানে ২১টি পরীক্ষাগারে বিদেশযাত্রীদের করোনা নমুনা নেওয়া হচ্ছে। আর শুরুতে একটিমাত্র পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হলেও বর্তমানে রাজধানীর বড় তিনটি ল্যাবের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বিভাগীয় পর্যায়ের ল্যাবগুলোও। আমরা আশা করছি বিদেশগামী যাত্রীদের আর ভোগান্তি হবে না।’ বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)-এর পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান জানান, বর্তমানের ব্যবস্থাতে প্রতিদিন গড়ে সাত থেকে ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করার মতো সক্ষমতা তাদের রয়েছে। রাজধানী ঢাকাতে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে–ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন-নিপসম এবং ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ-আইপিএইচ। এর বাইরে বিশেষভাবে রয়েছে আইসিডিডিআরবি, এটা নির্ধারণ করা হয়েছে বিভিন্ন এনজিওতে কাজ করা বিদেশি নাগরিকদের জন্য, আইইডিসিআর নির্ধারিত রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের জন্য, পুলিশ হাসপাতাল পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য রয়েছে আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ পরীক্ষা হচ্ছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারে। বেশি লোড না হলে নিপসম আর আইপিএইচে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা বিদেশযাত্রীদের জন্য সরকার নির্ধারিত নমুনা কেন্দ্র থেকে নমুনা পরীক্ষা করতে অনুরোধ করছি। যাতে করে সেন্ট্রাল ডাটাবেজ থেকে পরীক্ষার রিপোর্ট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেটি চেক করতে পারেন। কিন্তু বেসরকারি পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করালে সেটি সম্ভব হবে না, যার কারণে সেটি গ্রহণযোগ্যও হবে না।’
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মাদ শামসুজ্জামান বলেন, ‘মহাখালীতে অবস্থিত ডিএনসিসির অস্থায়ী আইসোলেশনে সেন্টারে যেসব নমুনা সংগৃহীত হয় সেগুলো পরীক্ষা হচ্ছে। গত ২৩ জুলাই থেকে এ প্রতিষ্ঠানে বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। চারটি মেশিনে এ পর্যন্ত বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৫ হাজারের বেশি। শুক্রবার (২ অক্টোবর) এ প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৯০০-এর বেশি। তার আগের দিন ছিল প্রায় এক হাজার ৭০০-এর বেশি।’